শরীরের বড় ও ওজন বহনকারী প্রধান সন্ধিগুলোর অন্যতম হাঁটু। ওপরের দিক থেকে ঊরুর হাড় (ফিমার), মাঝখানে হাঁটুর বাটি বা প্যাটেলা এবং নিচের দিকে পায়ের হাড় (টিবিয়া)—এই তিন হাড়ের সমন্বয়ে হাঁটু গঠিত। এসব হাড়কে একসঙ্গে রাখতে হাঁটুতে চারটি প্রধান লিগামেন্ট কাজ করে। এসব লিগামেন্ট প্রায়ই আঘাতের শিকার হয়, এতে হাঁটুতে ব্যথাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।
হঠাৎ মুচড়ে এনটেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
আঘাত, রিকশা থেকে পড়ে, গাড়ি বা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় লিগামেন্টে আঘাত।
ফুটবল, বাস্কেটবল, কাবাডি ও হাডুডু খেলোয়াড়দের লিগামেন্টে বেশি আঘাত হয়।
মই থেকে পড়ে, লাফিয়ে পড়ে, গর্তে পা পড়ে বা সিঁড়িতে নামার সময় লিগামেন্টে আঘাত হতে পারে।
প্রথমে তীব্র ব্যথা হয়। পরে ধীরে ধীরে ব্যথা কমে আসে। হাঁটু ভাঁজ বা সোজা করতে গেলে ব্যথা বেড়ে যায়। আঘাতের ১০ মিনিটের মধ্যেই হাঁটু ফুলে যায়। দাঁড়াতে বা হাঁটতে চেষ্টা করলে মনে হবে হাঁটু ছুটে যাচ্ছে বা বেঁকে যাচ্ছে। আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি ‘পপ’ বা ‘ক্র্যাক’ শব্দ শুনতে বা বুঝতে পারে।
দীর্ঘদিন লিগামেন্ট ইনজুরি থাকলে হাঁটুর পেশি শুকিয়ে যায় এবং হাঁটুতে শক্তি কমে যায়। উঁচু–নিচু জায়গায় হাঁটা যায় না, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে এবং বসলে উঠতে কষ্ট হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে হাঁটুকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। বরফের টুকরা বা ফ্রিজের ঠান্ডা পানি প্লাস্টিকের বেগে নিয়ে লাগালে ব্যথা বা ফুলা কমবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। এই পদ্ধতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে। হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে হাঁটুকে হার্টের লেবেল থেকে উঁচুতে রাখলে ফোলা কম হবে। ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করা যাবে। তারপর হাঁটুর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে।
হাঁটুর লিগামেন্ট আপনাআপনি জোড়া লাগে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হাঁটুর পেশির ব্যায়াম ও দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। প্রয়োজনে অস্ত্রোপচার লাগতে পারে।
অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, অর্থোপেডিক বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ঢাকা