জীবনে জ্বর হয়নি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আসলে জ্বর কোনো রোগ নয়; বরং রোগের লক্ষণ। বিভিন্ন কারণেই শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এর প্রধান কারণ জীবাণুর সংক্রমণ।
সংক্রমণ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে। এর মূলে থাকে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস ইত্যাদি। ইনফেকশন বা সংক্রমণ ছাড়াও জ্বর হতে পারে, বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের কানেকটিভ টিস্যু ডিজিজ, লিম্ফোমা, এমনকি ক্যানসারে। আশ্চর্য হলেও সত্য, ওষুধ সেবনের কারণেও জ্বর হয়।
কোনো রোগী কৃত্রিমভাবে থার্মোমিটারের তাপমাত্রা বাড়িয়ে জ্বর দেখাতে পারে। এ রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। অনেক রোগী জ্বর না থাকলেও জ্বর জ্বর লাগে বলে অভিযোগ করেন এবং ঘন ঘন চিকিৎসকের কাছে যান। তাঁদের কোনো পরীক্ষায় কিছুই ধরা পড়ে না। তাঁদেরও মনো-বিশ্লেষণ দরকার। আবার কিছু ক্ষেত্রে জ্বরের কারণ সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
জ্বর হলে করণীয়
কেউ কেউ জ্বর হলেই রোগীর গায়ে কাঁথা-কম্বল, লেপ ইত্যাদি চাপিয়ে দেন। ঠান্ডা লাগবে ভয়ে ঘরের দরজা-জানালাও বন্ধ রাখেন। এগুলো জ্বর কমাতে সহায়তা করে না। জ্বর হলে এমনিতেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তখন আবার শরীরে মোটা কাপড় জড়ানো হলে তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়।
জ্বরে পাতলা ও ঢিলেঢালা কাপড় পরা উচিত। আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা ভালো।
মধ্যম গতিতে ফ্যান চালিয়ে দেওয়া যায়। এমনকি কম মাত্রায় এয়ার কন্ডিশনার চালু রাখা যেতে পারে।
জ্বর হলে গায়ে তেল মালিশ করা ঠিক নয়। এতে লোমকূপগুলো ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যায় এবং শরীরের বাড়তি তাপ বের হতে পারে না।
জ্বরের ধরন লক্ষ করা উচিত। কখন আসে, কতক্ষণ থাকে, তাপমাত্রা কত ওঠে, কীভাবে কমে—এসব লিখে রাখা দরকার। সেই সঙ্গে ঘাম বা কাঁপুনি হচ্ছে কি না। এতে চিকিৎসকের জন্য রোগনির্ণয় করা সহজ হবে।
জ্বর কমাতে পানি দিয়ে শরীর মোছা বা স্পঞ্জ করা ভালো। প্রয়োজনে মাথায় পানি ঢালা যায়। এভাবে কয়েকবার করলে শরীরের তাপমাত্রা কমে আসবে। শরীর স্পঞ্জ বা মুছে দেওয়ার সময় ঠান্ডা পানি বা বরফমিশ্রিত পানি ব্যবহার করা উচিত নয়। আইসব্যাগ ব্যবহার করে জ্বর নামানোও ঠিক নয়। স্বাভাবিক বা কুসুম গরম পানি হতে হবে।
জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন। সেই সঙ্গে প্রচুর পানি খেতে হবে। কেননা ঘাম হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে। ওষুধ খেতে না পারলে পায়ুপথে প্যারাসিটামল সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে। অন্য ওষুধ না খাওয়া উচিত। অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ