ভালো থাকুন

নারীদের হরমোনজনিত রোগ পিসিওএস প্রতিরোধে যা করতে হবে

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) প্রজননক্ষম নারীদের হরমোনজনিত একটি রোগ। আক্রান্ত নারীর মধ্যে উচ্চ মাত্রার আন্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোনের উপস্থিতি দেখা যায়। মেয়েদের দেহে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেলে ডিম্বাশয়ের আশপাশে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয়।

ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বিকশিত হয়ে বের হওয়ার পথে বাধার মুখে পড়ে। এভাবে একসময় ডিম্বাণু স্ফুরণ বা ওভুলেশন বন্ধ হয়ে যায়। এতে নিয়মিত ঋতুচক্র ব্যাহত হয়। বন্ধ্যত্ব দেখা দেয়।

পিসিওএস জিনগত ত্রুটি ও পরিবেশগত ত্রুটির সমন্বিত ফল। জিনগত ত্রুটি আছে এমন কিশোরীর দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, কম শারীরিক শ্রম ও ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যগ্রহণ এ রোগের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ডিম্বাশয় অতিরিক্ত টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি করতে উদ্দীপ্ত হয়, যার পেছনে পিটুইটারি গ্রন্থির অতিরিক্ত এলএইচ নিঃসরণ ও দেহে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের উপস্থিতি অন্যতম কারণ।

অধিকাংশ সময় ঋতুস্রাব কম হলেও কারও কারও পিসিওএস হতে পারে। মুখে ও শরীরে অত্যধিক লোম, ব্রণ হতে পারে। এর সঙ্গে আরও কিছু শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। যেমন তলপেটে ব্যথা, মখমলের মতো কালো ত্বক (ঘাড়, বগল ইত্যাদি জায়গায়), বন্ধ্যত্ব, গর্ভপাত, কণ্ঠস্বর পুরুষালি বা মোটা ইত্যাদি।

  • পিসিওএস শনাক্ত করতে নিচের যেকোনো দুটির উপস্থিতি আবশ্যক—

  • নারীদেহে অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের উপস্থিতির প্রমাণ।

  • অনিয়মিত ঋতুস্রাব।

  • ডিম্বাশয়ে সিস্ট।

প্রতিরোধ কীভাবে

পিসিওএস প্রতিরোধে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন ওজন কমানো ও নিয়মিত ব্যয়াম। এ ছাড়া খাদ্য ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত পরিমিত শারীরিক শ্রম এবং ঝুঁকি বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ও সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া। প্রত্যহ পর্যাপ্ত তাজা সবুজ বা রঙিন শাকসবজি খাওয়া, নিয়মিত সতেজ ফল খাওয়া (টক ও কম মিষ্টি ফল বেশি উপকারী), আমিষ বাড়িয়ে শর্করাজাতীয় খাদ্য কম খাওয়া।

পিসিওএসে আক্রান্ত ব্যক্তির ওজন কমানো জরুরি। ওজন পাঁচ শতাংশ কমাতে পারলে মাসিক নিয়মিত হতে শুরু করে। ১০ শতাংশ কমাতে পারলে ডিম্বাশয়ের কার্যক্রম স্বাভাবিক এবং বন্ধ্যত্বের সমস্যা দূর হয়। প্রতিদিন প্রচুর পানি/মিষ্টিহীন জলীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত একই সময়ে সকালের নাশতা করতে হবে।

একই সঙ্গে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বিতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমালে পিসিওএস দূর হতে পারে।

  • ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়