চুল পড়া একটি খুবই পরিচিত সমস্যা। নারী ও পুরুষ উভয়ই চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের তুলনায় পুরুষেরা এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। তবে নারীদের মধ্যে চুল পড়া নিয়ে বেশি উদ্বেগ দেখা যায়।
নারীদের চুল পড়ার সমস্যার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাথার উপরিভাগ ও দুই পাশের চুল পড়ে যায় কিংবা পাতলা হয়ে যায়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২৫টি পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। যখন চুল পড়ার হার এর চেয়ে অনেক বেশি হয় ও নতুন চুল গজানোর পরিমাণ কমে আসে, তখন তা সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী এ সমস্যায় ভোগেন।
চুল পড়ার সমস্যাকে অ্যানাজেন ইফফ্লুভিয়াম ও টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম—এ দুই ভাগে ভাগ করা যায়। বিভিন্ন ওষুধের প্রতিক্রিয়া ও কেমোথেরাপির কারণে চুল পড়লে সেটি অ্যানাজেন ইফফ্লুভিয়াম। আর চুলের ফলিকল যখন রেস্টিং স্টেজে যায়, চুল আর বড় না হয়ে শুধু ঝরে, তখন সেটা টেলোজেন ইফফ্লুভিয়াম।
সাধারণ কারণ ও প্রতিকার
—ডায়েট করতে গিয়ে নারীরা অনেক সময় পুষ্টিকর খাবার কম খান। এতে প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টি উপাদান বিশেষত আমিষ, খনিজ ও ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য আমিষ উপকারী। এর ঘাটতি হলে চুল পড়া শুরু হতে পারে। অনেকে আমিষের তুলনায় শর্করা বেশি খান। মানে সঠিক অনুপাতে খান না। তাই খাদ্যতালিকায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডালের মতো খাবার রাখতে হবে।
ভিটামিন বি-১২ ও ভিটামিন-ডি চুলের বৃদ্ধি ঘটায় এবং মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়। তাই এ দুটি ভিটামিনের অভাবে চুল পড়তে পারে। মাংস ও দুগ্ধজাত খাবারে ভিটামিন-১২ ও ভিটামিন-ডি আছে। যেসব নারী সূর্যালোকের সংস্পর্শে কম আসেন, তাঁদের ভিটামিন–ডির ঘাটতি হতে পারে। ঘাটতি বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে মাল্টিভিটামিন ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িতে প্রোজেস্টেরন হরমোন থাকে। এটা নারীদের চুল পড়ার অন্যতম কারণ। গর্ভধারণের সময় একজন নারীর শরীরে নানা হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। এর প্রভাবে চুল পড়ে যেতে পারে। গর্ভধারণের তিন থেকে চার মাস পর পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে হবে। এরপরও চুল পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নারীদের চুলের নানা স্টাইল চুল পড়ার কারণ হতে পারে। সব সময় উঁচু করে, শক্ত করে চুল বেঁধে রাখলে চুল ভেঙে যায়। ফলে চুল পড়া শুরু হতে পারে।
চুলে বারবার রং ও রিবন্ডিং করাও চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
হরমোনজনিত ও থাইরয়েডের সমস্যায় চুল পড়া বেশি হতে পারে।
এ ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা, রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, হজমের সমস্যা, মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস, মূত্রনালির প্রদাহ, মেনোপজ, শরীরে ভিটামিন–এ–এর আধিক্য, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়ার কারণে যেকোনো বয়সের নারীর চুল পড়া শুরু হতে পারে।
ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগ, শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা