২০২৪ সালে এসে অনেকে কাছের মানুষজনের অকালপ্রয়াণে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হয়েছেন। কেউ কেউ আবার মুটিয়ে যাওয়ার ভয়ে গড়ে তুলেছেন হেলদি খাবারের অভ্যাস। তবে নানা রকম খাবারের মধ্যে গোটা শস্যজাতীয় খাবারের জনপ্রিয়তা বাড়তে দেখা গেছে। বিভিন্ন রকম পানীয়র প্রতিও ঝোঁক দেখা গেছে। এখানে থাকছে তেমন কিছু জনপ্রিয় খাদ্যাভ্যাসের বর্ণনা।
বীজজাতীয় যেকোনো খাবারই পুষ্টিকর। এসবের মধ্যে ২০২৪ সালে চিয়া সিড অন্যতম আলোচিত নাম। মিন্ট প্রজাতির পুষ্টিকর এই উদ্ভিদের বীজ শরীরে শক্তি জোগায়। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের খাবারের তালিকায় এখন বেশ জনপ্রিয় নাম চিয়া সিড। আপনি যদি ঠিকমতো স্বাস্থ্যকর উপায়ে এই বীজ খান, ওজন কমবে। কেননা মাত্র ২ চামচ চিয়া সিডে যে পরিমাণ ফাইবার থাকে, তা দিনের প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক। সকালের নাশতায় ২ চা–চামচ চিয়া সিড খেলে তা পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আপনার পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেবে। এ ছাড়া ১ চা–চামচ চিয়া সিড এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তা ১ গ্লাস পানিতে ১ চা–চামচ লেবুর রস ও ১ চা–চামচ মধুর সঙ্গে সকালে খালি পেটে খেলে মেদ পোড়াতেও সাহায্য করে।
এই বিস্ময়কর বীজে রয়েছে আমিষ, আঁশ, ভালো চর্বি, ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম ও সেলেনিয়াম। উপকারী এসব উপাদান ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। সূর্যমুখীবীজ হালকা ভেজে শুধুও খাওয়া যায়। মূল খাবারের মাঝের সময়ে হালকা ক্ষুধা অনুভব হলে স্ন্যাকস হিসেবে মিক্সড ড্রাই ফ্রুটসে রাখতে পারেন সূর্যমুখীবীজ।
এই বীজে রয়েছে উচ্চমাত্রার আমিষ। উপকারী ফ্যাট থাকায় ওজন দ্রুত কমাতে সহায়তা করে। কুমড়ার বীজ ম্যাগনেশিয়ামের একটি দারুণ উৎস, যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। সুস্বাদু এই বীজ হালকা ভেজে খাওয়া যায় দিনের যেকোনো সময়।
পুষ্টিবিদেরা ওটসকে প্রথম শ্রেণির সকালের নাশতার মর্যাদা দিয়েছেন। এটাই নাকি বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর শস্য। ওটস নানাভাবে খেতে দেখা গেছে এ বছর। দুধে নানা রকমের তাজা ও শুকনা ফল আর মধু মিশিয়ে ওটস খাওয়া যায়। পিঠার মতো করে সেঁকেও খেতে দেখা যায়। আবার ব্লেন্ড করে বাটার মিশিয়েও খেয়ে ফেলতে পারেন। ওটস দিয়ে বানানো যায় স্বাস্থ্যসম্মত কেক, বিস্কুট, রুটি, স্মুদি, স্যুপ, ফ্রাইড রাইস, খিচুড়িসহ অনেক কিছু।
২০২১ সালে জার্নাল অব নিউট্রিশনে প্রকাশিত একটা নিবন্ধে বলা হয়েছে, ওটসের ফাইবার পাকস্থলীকে দীর্ঘক্ষণ সন্তুষ্ট রাখবে। আবার সারা দিন শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ করার প্রবণতাও কমাবে। ক্যালরি কম গ্রহণ করলে ওজন কমানোও সহজ হবে। এ ছাড়া বেটা-গ্লুকোনের প্রভাবে পাকস্থলীতে পেপটাইড ওয়াইওয়াই নামের একটি হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোন আপনাকে মানসিকভাবে তৃপ্ত রাখে আর খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমায়।
খেলোয়াড়েরা তো বটেই, স্বাস্থ্যসচেতন তরুণ-তরুণীদেরও প্রিয় পানীয় হয়ে উঠেছে আজকাল ইলেকট্রোলাইটস ড্রিংক। পাশাপাশি টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের নানা রকম কনটেন্ট ইলেকট্রোলাইটস পানীয়র চাহিদা বাড়িয়ে চলেছে। বাজারেও সহজে মিলছে এই সুপার-হাইড্রেটিং মিনারেল। ইলেকট্রোলাইটস আমাদের দেহেই থাকে। নিয়মিত আমরা যা খাই ও পান করি, সেসবের মধ্য দিয়ে এগুলো শরীরে প্রবেশ করে। তবে পেট খারাপ বা ব্যায়ামের কারণে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে অনেক সময় ইলেকট্রোলাইটস কমে যায়। ব্যায়ামের সময় অবশ্যই ঘামতে হবে। বাইরে রোদ–গরম থেকে ফিরলেও ঘামেন বেশির ভাগ মানুষ। ঘাম শুকিয়ে গেলে গাঢ় রঙের টি-শার্টে কিছু সাদা দাগ দেখা যায়, সহজভাবে এগুলোই ইলেকট্রোলাইটস। ইলেকট্রোলাইটস এমন খনিজ, যা নির্দিষ্ট তরলে দ্রবীভূত হয়ে বৈদ্যুতিক চার্জ বহন করে। মানবদেহে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড, বাইকার্বনেট, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফেটের প্রয়োজন হয়।
খাবারের উপকরণ হিসেবে আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার অনেক কাল আগে থেকেই। তবে ইদানীং অনেকে ওজন কমানো কিংবা এমনিতেও আপেল সিডার ভিনেগার খাচ্ছেন। ২০২৪ সালেও এই খাবার ছিল আলোচনায়। আপেল সিডার ভিনেগার তৈরি করা হয় আপেল, ইস্ট ও চিনি দিয়ে। এতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড থাকে ৫ শতাংশ। একে দুর্বল অ্যাসিড হিসেবে আখ্যায়িত করা হলেও ঘনত্ব বাড়লে তা শক্তিশালী অ্যাসিড বা অম্ল হিসেবে কাজ করতে পারে। যদিও আপেল সিডার ভিনেগারের খুব বেশি উপকারের তেমন কোনো প্রমাণ মেলে না। তারপরও একে অক্ষতিকারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বলা হয়, আপেল সিডার ভিনেগার মানবদেহের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া গতিময় করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। আর এই প্রচারণা থেকেই এর চাহিদা বেড়েছে।
ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ানো এবং খারাপ কোলেস্টেরল, বিশেষত ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে এই ভিনেগার। তবে যাঁরা বিভিন্ন ওষুধ, যেমন ডাইউরেটিক্স, লাক্সেটিভস, ডিগোক্সিন বা ইনসুলিন নেন, তাঁদের আপেল সিডার ভিনেগার থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ, এই ভিনেগার এসব ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। যাঁদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে হতে পারে বিপজ্জনক।
সুস্বাদু পানীয় হিসেবে স্মুদি বেশ জনপ্রিয় এখন। বলা চলে, স্মুদি খাওয়ার একধরনের ট্রেন্ডই চলছে শহরে। বাড়ির বাইরে গেলেই চোখে পড়বে হরেক রকমের স্মুদির দোকান। নানা বয়সের মানুষ ভিড় করছে সেসব দোকানে। ভালো লাগে বলেই মানুষ স্মুদি খায়, সেটা যেমন একটা বিষয়, তেমনি এর সঙ্গে স্বাস্থ্য ভালো থাকারও যোগাযোগ আছে। এর জনপ্রিয়তার এটাও একটা কারণ। ত্বকের যত্নে এখন বেশ জনপ্রিয় পানীয় স্মুদি। শরীরের ভেতরকার টক্সিন বা দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে, যে কারণে ভেতর থেকেই ত্বক হয়ে ওঠে আরও উজ্জ্বল। সাধারণত সব ধরনের ফল, সবুজ শাকসবজি, দুধ, বাদাম, মধু আর ওটসের সমন্বয়ে তৈরি হয় এ স্মুদি। কখনো মেশানো হয় পানি। এ কারণে একই সঙ্গে মিলে যায় অনেক খাবারের পুষ্টিগুণ। ওজন কমাতেও স্মুদি একটি জনপ্রিয় পানীয়।