নারীদের ক্ষেত্রে নাভি বরাবর পেটের পরিধি যদি ৮০ আর পুরুষের ক্ষেত্রে ৯০ সেন্টিমিটারের বেশি হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে পেটে ‘যথেষ্ট পরিমাণ’ মেদ জমেছে। তার মানে হার্টেও মেদ জমার সম্ভাবনা আছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই মেদ আপনি কীভাবে কমাবেন? নিউরনের নির্দেশে ফ্যাট ভেঙে ছোট ছোট ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিণত করে লাইপেজ এনজাইম। এই ফ্যাটি এসিড ‘এনার্জি’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ কারণেই মেদ কমাতে ‘লো কার্ব ডায়েট’ কার্যকর। কেননা তখন পেটে ও পেট থেকে হার্টে জমে থাকা মেদ থেকেই শক্তি উৎপাদিত হয়। ব্যায়াম এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ফলে ডায়েট আর ব্যায়াম শরীরের জমে থাকা মেদ ঝরাতে আবশ্যক। এ ছাড়া এই ৪ পদ্ধতিও আপনার শরীরের মেদ ঝরাতে খুবই সাহায্য করবে।
১. পর্যাপ্ত গভীর ঘুম
দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম খুবই জরুরি। এ সময় সব নিউরন বিশ্রাম পায়। ফলে আপনি যখন ঘুম থেকে ওঠেন, তখন স্নায়ু সারা দিনের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। লাইপেজ এনজাইম চর্বিকে ভেঙে ছোট ছোট ফ্যাটি অ্যাসিডে রূপান্তর করতে পারে।
এ ছাড়া আপনি যখন ঠিকমতো ঘুমান, তখন আপনার খাবারের চাহিদাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে, কেবল ঠিকমতো ঘুমানোর মধ্য দিয়ে একজন মানুষ যাঁরা ঠিকমতো ঘুমান না, তাঁদের তুলনায় দিনে ২৭০ ক্যালরি কম গ্রহণ করেন। আর ৩ হাজার ৫০০ ক্যালরি মানে এক পাউন্ড ফ্যাট। মানে আপনি কেবল ঠিকমতো ঘুমানোর মধ্য দিয়েই ১৩তম দিনে শরীরের ১ পাউন্ড মেদ ঝরাতে পারবেন।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘণ্টা আগে থেকে মুঠোফোনে ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। কেননা, মুঠোফোনের নীল আলো ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। ঘুমের জন্য দায়ী মেলাটনিন হরমোন। আর মুঠোফোনের এক বাউট নীল আলো ৯০ মিনিট পর্যন্ত মেলাটোনিনের নিঃসরণ বন্ধ রাখতে পারে। তাই রাতে ঘুম ভাঙলেও মুঠোফোনে সময় দেখবেন না। দরকারে অ্যানালগ ঘড়িতে সময় দেখুন।
২. অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড
আমাদের স্নায়ু ও এর কোষের মূল উপাদান হলো অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। শরীরের ফ্যাট ভাঙতেও প্রয়োজন এই ফ্যাটি অ্যাসিড। আর এই ফ্যাটি অ্যাসিড শরীর আপনাআপনি তৈরি করতে পারে না। তাই এমন সব খাবার খেতে হবে, যেগুলোয় এসব উপাদান থাকে।
সব ফ্যাটি অ্যাসিডের ভেতর সবচেয়ে জরুরি হলো ওমেগা থ্রি। ওয়ালনাট বা আখরোটে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি থাকে। যদি প্রতিদিন আমরা যদি তিন গ্রাম ওমেগা গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের নিউরনের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ফলে নিউরন মেদ ঝরানোর জন্য আরও ভালোভাবে কাজ করে। প্রতি ১০ গ্রাম আখরোটে ১ গ্রাম ওমেগা থ্রি থাকে। ফলে দিনে ৩০ গ্রাম বা ১০টা আখরোটই যথেষ্ট। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে আখরোটে প্রচুর ক্যালরি থাকে। তাই অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না।
স্যামন মাছ, চিয়া সিড, অ্যাভোকাডো, পাঙাশ, ইলিশ, রূপচাঁদা মাছেও ওমেগা থ্রি পাওয়া যায়।
৩. পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া
আমাদের পেটে ট্রিলিয়ন ব্যকটেরিয়া থাকে। এর ভেতর কিছু ব্যাকটেরিয়া ভালো, কিছু ক্ষতিকর। মেদ ঝরানোর জন্য আমাদের পেটে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। আর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। এই যেমন বাটার মিল্ক ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া উৎপন্ন করে। আর ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া পেটের মেদকে সহজেই শক্তিতে রূপান্তর করে। সেই সঙ্গে বাটার মিল্কে আছে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি ১২, রাইবোফ্লাবিন। গরমকালে দিব্যি প্রতিদিন ২ গ্লাস বাটার মিল্ক খেতে পারেন।
১ কাপ দই, ১ গ্লাস পানি, কয়েকটি পুদিনাপাতা, কয়েকটি ধনিয়াপাতা, একটু ধনিয়াগুঁড়া, ৪/৫টি কালো গোলমরিচ, ১ টুকরা আদা—এই সবকিছু একসঙ্গে ব্লেন্ড করে খেতে পারেন। চাইলে এর সঙ্গে ১ চিমটি লবণ মেশাতে পারেন।
৪. থাইরয়েড হরমোন
থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ ও মেটাবলিক রেট নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটা উপাদান হলো সেলোনিয়াম।
প্রতিদিন মাত্র ৫৫ মাইক্রোগ্রাম সেলোনিয়ামই যথেষ্ট। যাঁদের হাইপোথাইরয়েডিজম আছে, তাঁরা ৪০০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সেলোনিয়াম গ্রহণ করেন। আর সেলোনিয়ামের জন্য প্রতিদিন ২টি ব্রাজিল বাদামই যথেষ্ট। স্যামন, টুনা মাছ, চিংড়ি থেকে শুরু করে সামুদ্রিক খাবারেও সেলোনিয়াম থাকে।
সূত্র: মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. পালানিয়াপ্পান মানিকাম— এর ইউটিউব চ্যানেল