বর্ষাকালে প্রকোপ বাড়ে বলে কয়েল জ্বালানোসহ মশার তাড়ানোর প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিন
বর্ষাকালে প্রকোপ বাড়ে বলে কয়েল জ্বালানোসহ মশার তাড়ানোর প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিন

ভালো থাকুন

বর্ষায় মশাবাহিত যে তিন রোগে সতর্ক থাকবেন

বিশ্বে বছরে ৫০ কোটি সংক্রমণ ও ১০ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ মশা। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু জ্বর, হলুদ জ্বর, চিকুনগুনিয়া ও অন্যান্য রোগ মশার কামড়ে হয়। বর্ষাকালেই বাড়ে মশার প্রকোপ।

 

ম্যালেরিয়া

ম্যালেরিয়া হলো প্লাজমোডিয়াম পরজীবীসৃষ্ট তীব্র জ্বর। এই পরজীবীগুলো সংক্রমিত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়, যা রাত নয়টা থেকে ভোর পাঁচটার মধ্যে বেশি সক্রিয় থাকে। ম্যালেরিয়ায় সাধারণত প্রচণ্ড জ্বর ও মাথাব্যথা হয়। ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা না করলে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে গুরুতর অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

ডেঙ্গু জ্বর

এ জ্বর ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এবং স্ত্রী মশার মাধ্যমে ছড়ায়। বেশির ভাগ প্রজাতির এডিস মশা দিনে কামড়ায়। ডেঙ্গুর তিনটি ধরন—‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগী স্বাভাবিক থাকেন। তাঁদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির হন। তাঁদের বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়া যথেষ্ট। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। এতে লিভার, কিডনি ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া

চিকুনগুনিয়া ভাইরাস দিয়ে সৃষ্ট সংক্রামক রোগ। চিকুনগুনিয়ায় হঠাৎ শুরু হওয়া জ্বর, সঙ্গে সন্ধিব্যথা ও ফোলা থাকে। ব্যথা কয়েক দিন থেকে সপ্তাহ, মাস, এমনকি বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ডেঙ্গুর সঙ্গে তুলনা করলে চিকুনগুনিয়ায় ব্যথা বেশি তীব্র হয়। পেশিব্যথা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ও কিছু ক্ষেত্রে ফুসকুড়ি হতে পারে।

চিকিৎসা

মশাবাহিত বেশির ভাগ রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ম্যালেরিয়া ওষুধের মাধ্যমে সহজেই নিরাময়যোগ্য, কিন্তু ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার কোনো ওষুধ নেই। জটিলতা দেখা দিলে সহায়ক চিকিৎসা প্রয়োজন। পরিস্থিতি খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিকার

  • কয়েল, অ্যারোসল, লিকুইড ভ্যাপোরাইজার ও অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে মশাকে দূরে রেখে সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো যায়।

  • বন্ধ ঢাকনাসহ পাত্রে পানি সংরক্ষণ করে মশার প্রজনন কমানো সম্ভব।

  • জমা পানি নিয়মিত ফেলতে হবে। ভাঙা বালতি, বাক্স, ড্রাম ও ক্যানের মতো অবাঞ্ছিত জিনিস ফেলে দিয়ে চারপাশ পরিষ্কার
    রাখতে হবে।

  • মশা নিয়ন্ত্রণে দরজা-জানালায় সুরক্ষা কভারিং নেট ব্যবহার করা ভালো।

  • ঘুমালে মশারি ব্যবহার করা উচিত; এমনকি দিনের বেলায়ও। সন্ধ্যা ও ভোরে মশা বেশি কামড়ায়। এ সময় সতর্ক থাকুন।

  • মশার কামড় এড়াতে হাত-পা ঢাকা জামাকাপড় পরুন। মশা তাড়াতে লোশন, রোলঅন ও ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। তবে কয়েলের ধোঁয়া উপযুক্ত নয়।

ডা. এ কে এম মূসা: সাবেক অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল