আগাম কোনো সতর্কসংকেত ছাড়াই অনেক সময় দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলে মানুষ। ঘুমের মধ্যেও এটা ঘটতে পারে। এই অন্ধত্ব সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের মধ্যে ঘটে থাকে। তাই চিকিৎসকের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই অনেক ক্ষেত্রে রোগীর দৃষ্টি ফেরানো আর সম্ভব হয় না।
কেন এমন হতে পারে
১. চোখের মারাত্মক কোনো আঘাত।
২. রেটিনার রোগ।
৩. চোখের ধমনির হঠাৎ রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হওয়া।
৪. চোখের অপটিক স্নায়ুর মারাত্মক প্রদাহ।
৫. ডায়াবেটিস
৬. উচ্চ রক্তচাপ।
৭. হৃদ্রোগের জটিলতা।
৮. ধমনির নিজস্ব রোগ, প্রদাহ।
৯. রেটিনা ডিসপ্লেসমেন্ট।
এর মধ্যে চোখের কেন্দ্রীয় রক্ত ধমনির সঞ্চালন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া অন্যতম কারণ, যা সিআরএও নামে পরিচিত।
কীভাবে হয়
শরীরের রক্ত প্রবাহের মধ্যে যদি কোনো জমাট বস্তু বাধা (প্লাগ) সৃষ্টি করে, তবে ধমনির পরবর্তী অংশ রক্তশূন্যতায় ভোগে। এলাকাটা যদি শরীরের সংবেদনশীল অংশ হয়, তাহলে কোষগুলো নষ্ট হতে থাকে। শরীরের সংবেদনশীল এলাকাগুলোর মধ্যে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড কিংবা চোখের স্নায়ু স্তর বা রেটিনা অন্যতম।
লক্ষণ কী
মাথায় বা চোখের আঘাত না হলে রোগী সাধারণত কোনো যন্ত্রণা ছাড়াই হঠাৎ ঝাপসা বোধ করতে থাকেন। এক চোখ বা দুই চোখেও এটা হতে পারে।
রোগীর কাছে দুপুরকে হঠাৎ মনে হতে পারে সন্ধ্যা
মনে হতে পারে কালো একটা ছায়া নিচে নেমে আসছে আর ঝাপসা হয়ে আসছে দৃষ্টি। কোনো ব্যথা, জ্বালা–যন্ত্রণা, পানি পড়া বা পিঁচুটি কিছু হচ্ছে না অথচ তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার। ক্ষেত্রবিশেষে সামনে হয়তো বিদ্যুৎ চমকানি বা আলোর ছটা দেখতে পারেন।
কী করতে হবে
এমনটি হলে বিলম্ব না করে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি নেওয়া যাবে, তত ভালো।
চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যত তাড়াতাড়ি রোগীকে হাতে পাবেন (৩০-৬০ মিনিট), ততই ফলাফল ভালো হতে পারে।
রক্ত প্রবাহে প্লাগ বা বাধা থাকলে প্লাগ গলানোর ইনজেকশন দেওয়া যায়। এ ছাড়া চোখের ওপর বিশেষ চাপ দিয়ে প্লাগ সরানোর ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
মনে রাখা দরকার, চোখের স্নায়ু স্তর (রেটিনা) কোষ দেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুর অংশ, যথাযথ রক্ত প্রবাহ ছাড়া যা মোটেও টিকে থাকতে পারে না। একবার এ ধরনের কোষের মৃত্যু হলে তাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয় না। তাই পরিণামে স্থায়ী অন্ধত্ব বরণ করে নেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকে না।
ডা. আহসান কবির: চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও ফেকো সার্জন, যশোর