যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল চিকিৎসক সম্প্রতি মস্তিষ্কের অবনতি নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। এ সময় তাঁরা ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং বা এমআরআইকে পর্যবেক্ষণ করেছেন বেশ গুরুত্বের সঙ্গে। এটা করতে গিয়ে তাঁরা বেশ কিছু কৌশল চিহ্নিত করেছেন, যা আমাদের মস্তিষ্ককে সবল ও সতেজ রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের মাল্টিস্পেশালিটি একাডেমিক মেডিকেল সেন্টার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের নিদ্রাবিশেষজ্ঞরা ঘুমের ব্যাপারে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। মস্তিষ্কের অবনতির ক্ষেত্রে ঘুমের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন তাঁরা। ঘুমের ব্যাপারে তাঁদের মত, সুস্থ একজনের জন্য প্রতিদিন সাড়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
তবে এই সময়ও যে অনেকে পূরণ করতে পারেন না, সে বিষয়ে তথ্য দিয়েছে অস্ট্রেলীয় সরকারের একটি উদ্যোগ ‘ন্যাশনালি কনসিসটেন্ট কালেকশন অব ডেটা’। তারা বলছে, ২৫ শতাংশের বেশি পূর্ণবয়স্ক মানুষ পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে পারেন না।
গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের কোষগুলোকে মেরামত করার সুযোগ দেয়। এর ফলে ক্যানসার প্রতিরোধ করা সহজ হয়, বিপাকীয় স্বাস্থ্য স্থিতিশীল থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্বাভাবিক ক্রিয়া ঠিক থাকে। এ ক্ষেত্রে আমাদের জানা উচিত যে বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে মস্তিষ্কও কিন্তু রয়েছে। আর মস্তিষ্ক থাকা মানে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য নিয়েও কথা চলে আসে। আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজির জার্নালে ২০২৪ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মাঝবয়সে ধারাবাহিকভাবে খুবই কম ঘুম মস্তিষ্কের বুড়িয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ফ্রান্সিসকোর ডক্টরাল গবেষকদের একটি দল ৫৮৯ জনের ঘুমের প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে, যাঁদের গড় বয়স ৪০ বছর। পাঁচ বছর পর কিছু প্রশ্নসহ দলটি আবার তাঁদের সঙ্গে দেখা করে। প্রশ্নগুলো ছিল ঘুমের গুণমান ও সময়কাল নিয়ে।
এই ফলোআপের ১০ বছর পর (প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের ১৫ বছর পর) গবেষকেরা অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের বয়স নির্ধারণ করার জন্য এমআরআই করেন। তাঁরা এই এমআরআই করেছেন মূলত বয়সজনিত ক্ষয়িষ্ণুতার ওপর ভিত্তি করে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানিয়েছে, মস্তিষ্কের ক্ষয়িষ্ণুতা দেখা দেয় মূলত স্বাস্থ্যকর টিস্যু ক্ষয়ে গেলে, নিউরনের ক্ষতি হলে কিংবা নিউরনের মধ্যে সংযোগের ঘাটতি দেখা দিলে।
শেষ পর্যন্ত গবেষকেরা খুঁজে পেয়েছেন, যাঁরা ধারাবাহিকভাবে ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের মস্তিষ্ক দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজির জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ফ্রান্সিসকোর মনোরোগবিশেষজ্ঞ ও গবেষণাপত্রের লেখক ক্লেমেন্স ক্যাভাইলেস। তিনি বলেছেন, ‘আগের গবেষণায় ঘুমের সমস্যাগুলোকে মানুষের পরবর্তী জীবনের দুর্বল চিন্তাভাবনা ও স্মৃতিশক্তির দক্ষতার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যা মানুষকে ডিমেনশিয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলে। আমাদের গবেষণা বলছে, খুবই কম ঘুম মানুষের মস্তিষ্কে মাঝবয়সের তিন বছর আগেই বার্ধক্য এনে দেয়।’
দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, এমনটি যাঁদের সঙ্গে ঘটে, তাঁরা একধরনের ‘জৈবিক বয়স’ অনুভব করেন, যা তাঁদের স্বাভাবিক বয়সের চেয়ে বেশি। সুতরাং নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম যে কত জরুরি, তা আমাদের অনুধাবন করতেই হবে। মনে রাখতে হবে, মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়ার এটাই সেরা উপায়।
আমেরিকান একাডেমি অব নিউরোলজির সদস্য এবং একটি গবেষণাপত্রের সহলেখক ক্রিস্টিন ইয়াফি অবশ্য ভালো ঘুমের অভাব থেকে মস্তিষ্কের অবনতি রোধ করার জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। পরামর্শ না বলে কিছু কৌশল বাতলে দিয়েছেন বলা যেতে পারে। কী সেই কৌশল? তা হলো ঘুমের সময়সূচি নিয়মিত বজায় রাখা, ব্যায়াম করা, ঘুমাতে যাওয়ার আগে ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল গ্রহণ না করা এবং শরীর শিথিল করার কৌশল অবলম্বন করা।
সূত্র: দ্য হেলদি ডটকম