কাঁদলে কী লাভ হয় জানেন?

কাঁদলে চোখের পানি পড়ার জন্য যে ইন্দ্রিয় দরকার হয়, তা তৈরি হতে শিশুদের সাত আটমাস লাগে। মডেল: নুমাইরা মোস্তফা ও সিফাত আরা ফাতেমা
ছবি: অগ্নিলা আহমেদ

জন্মলগ্ন থেকেই কান্নার সঙ্গে মানুষের একটি বিশেষ সংযোগ আছে। জন্মের পর প্রথম কান্নার সঙ্গে প্রথমবার সরাসরি নিজে পৃথিবীর অক্সিজেন গ্রহণ করে শিশু। এ ছাড়া শিশুর ফুসফুস, নাক ও মুখে যে অতিরিক্ত তরল পদার্থ থাকে, সেটি কান্নার সঙ্গে বাইরে বের হয়ে যায়। তবে সদ্য জন্মানো শিশুরা যতই কাঁদুক না কেন, কিন্তু তাদের চোখ থেকে পানি বের হয় না। কেননা, কান্নার জন্য যে ইন্দ্রিয় দরকার, তা তখনো তৈরি হয়নি। এই ইন্দ্রিয় পুরোপুরি গঠিত হতে সাধারণ সাত থেকে আট মাস লেগে যায়।

ছোটবেলায় হয়তোবা বুঝে বা না বুঝে কেঁদেছেন, তাই বলে কি বড় হয়েও কাঁদবেন? উত্তর হচ্ছে—হ্যাঁ! অবশ্যই কাঁদবেন।

কান্না শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

কেননা, কান্না শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিজ্ঞানীদের মতে, কান্নার সময় চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি চোখের আশপাশে থাকা ধুলাময়লাও বের হয়ে যায়। চোখের পানি চোখকে মসৃণ রাখে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। আর যখন মনের গভীর থেকে কান্না আসে, তখন কান্নায় একপ্রকার ব্যথানাশক কেমিক্যাল ‘লিউসিন-এনকেফালিন’ থাকে। এ কারণেই গভীর বেদনায় কাঁদার পর মানুষের চাপমুক্ত লাগে। চলুন জেনে নিই কান্না কীভাবে শোক ও গ্লানিকে মন্দীভূত করে—

শারীরিক ও মানসিক স্বস্তি: কান্নাটা ঠিক তখনই আসে, যখন আমরা তীব্র মানসিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাই। তাই কান্নাকাটির পর একটা মানসিক স্বস্তি কাজ করে। ‘হোমিওস্টেসিস’ নামক এ অবস্থায় স্ট্রেস লেভেল কমে যায়। শরীর স্থির হয়।

শীতল হয় মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ: ক্রন্দনকালে আমরা সাধারণত জোরে জোরে শ্বাস নিই। এই শীতল শ্বাস-প্রশ্বাস মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর অস্থিরতা কমায় এবং মাথা ঠান্ডা করে।

সুখানুভূতি ও প্রশান্তি: অনেকেই এ বিষয়ে একমত হবেন যে কিছুক্ষণ কান্নার পর প্রশান্তি বোধ হয়। এই সুখানুভূতির পেছনে আছে অক্সিটোসিন ও এন্ডোরফিন নামক হরমোনের নিঃসরণ। এন্ডোরফিন শরীরকে নিশ্চল করে আর অক্সিটোসিন দেয় ভালো অনুভুতি। সুতরাং এটা আরোগ্য লাভের স্বয়ংক্রিয় একটি উপায়।

শিশুর সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্কের প্রথম সূচনা হয় কান্না থামানোর চেষ্টার মাধ্যমে। মডেল: নুমাইরা মোস্তফা ও সিফাত আরা ফাতেমা

সম্পর্কে গভীরতা যোগ করে: জন্মের পর একটি শিশুর সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্কের প্রথম সূচনা হয় কান্না থামানোর চেষ্টার মাধ্যমে। শুধু ছোটবেলাই নয়, বরং বড় হওয়ার পরও আমরা কেবল তাদের উপস্থিতিতেই কাঁদতে পারি, যাদের সঙ্গে আমাদের মনের গভীর সম্পর্ক আছে। যাকে আপনি অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন যে সে আপনার অনুভূতির প্রতি সহানুভূতিশীল।

আবেগের আদান-প্রদান: আপনি অবশ্যই অচেনা জায়গা বা কর্মক্ষেত্রে কাঁদবেন না। খুব চাপ আর ভার লাগলেও এসব জায়গায় কাঁদার অনুমতি সাধারণত মস্তিষ্ক আপনাকে দেয় না। কারণ, কান্না হলো গভীরতর আবেগের বহিঃপ্রকাশ। কান্নার সময় আমরা সাধারণত মানসিকভাবে নাজুক অবস্থায় থাকি, প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য কারও সাহায্য প্রার্থনা করি। যারা আমাদের মানসিক চাপটাকে বুঝবে, তাদের জন্যই আমরা কান্না জমিয়ে রাখি।

একাকী কান্নাকাটি করার পর কষ্টগুলো নিয়ে নিজের মনে ভাবনা তৈরি হয়

আত্মসচেতনতা বাড়াতে: যখন অতিরিক্ত আবেগ দিয়ে কিছু ভাবা হয়, তখন মনের কষ্টগুলো দ্রুত বেরিয়ে আসতে চায়। একাকী কান্নাকাটি করার পর নিজের আবেগগুলোর পেছনের কারণ মনের পর্দায় দৃশ্যমান হয়। কষ্ট পাওয়ার কারণগুলো নিয়ে তখন মানুষ বিস্তারিত ভাবে। কার্যকলাপ নিয়ে গভীর চিন্তার পর সচেতন হয়ে ওঠে। এতে মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়, বাড়ে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা।

ব্যক্তিগত নিস্তার: সারা দিনের ক্লান্তি-হতাশার পর হয়তো একাকী কেঁদে উঠলেন। কাউকে কাছে না পেলে তখন নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। এটি কিন্তু আপনার জন্যই ভালো। জীবন নিয়ে এ সময় আপনার একান্ত উপলব্ধিগুলোর অগ্রগতিতে বিশেষভাবে কাজে লাগে। কাঁদার পর একান্তে ভারমুক্ত হয়ে ভালো একটা ঘুম দিন। আগের দিনের ভুলগুলো শুধরে নতুন উদ্যমে আরেকটি দিন শুরু করুন। নিজেকে নতুন মনে হবে।

ভালো ঘুমের কারণ: গবেষণার তথ্য বলছে, যেসব শিশুরা দিনের বেলায় অনেক কাঁদে, তাদের রাতে ঘুম ভালো হয়। বড়দের ক্ষেত্রেও তা–ই। হতাশা, ক্লান্তি ও বিষণ্নতায় নিজেকে চেপে না রেখে, মাঝেমধ্যে কাঁদলে ভালো হরমোন নিঃসৃত হয়। এতে ঘুমও ভালো হয়।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট