হেডফোন না ইয়ারফোন, কোনটা কানের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো

কথোপকথন বা গান শুনতে প্রায়ই আমরা হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করি
ছবি: পেকজেলস

কথোপকথন বা গান শুনতে কিংবা মিটিং করতে প্রায়ই আমরা হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করি। তবে দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করলে তৈরি হতে পারে নানা সমস্যা। তাহলে প্রশ্ন জাগে, দীর্ঘ সময় হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করলে কী হয়?

একটানা দীর্ঘ সময় হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করলে একসময় কানে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে থাকে। কান চুলকায়, কান ভারী বোধ হয়। দীর্ঘদিন এভাবে চললে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে আসতে পারে। উচ্চ মাত্রায় অল্প সময় শুনলেও ঘটতে পারে এই বিপদ। তবে ঠিক কত দিন বা কত সময় ধরে এসব অনুষঙ্গ ব্যবহার করলে এমন ক্ষতির শিকার হবেন আপনি, তার কিন্তু কোনো সোজাসাপটা জবাব নেই। কারণ, সবার কানের পর্দা এক রকম পুরু না। কারও বেশ পুরু, কারও আবার বেশ পাতলা।

হেডফোন বা ইয়ারফোন নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যায় কেবল নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দ শোনার জন্য

হেডফোন না ইয়ারফোন

ইয়ারফোন ব্যবহারের সময় কানের ভেতর সরাসরি শব্দ প্রবেশ করে। উল্টোদিকে হেডফোন কানের সঙ্গে এঁটে থাকে। কানের ভেতর পর্যন্ত এর কোনো অংশ পৌঁছায় না। ফলে শ্রবণশক্তির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব তুলনামূলক কম। আবার ইয়ারফোনের ইয়ারপিসটা কানের ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিতে হয়। এটি ব্যবহারের সময় দুটি বিষয় ঘটতে পারে। প্রথমত, কানের ভেতর যে ময়লা স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয়, ইয়ারপিসটা নিয়মিত কানে প্রবেশ করানোর কারণে বাইরের দিকে সেগুলোর সরে আসার স্বাভাবিক প্রবণতা ব্যাহত হয়। ফলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ময়লা আর বাইরের দিকে সরে না–ও আসতে পারে। ক্রমাগত এ রকম চলতে থাকলে কানের ভেতর অনেক ময়লা জমে যেতে পারে। ফলে কান ভারী বোধ করতে পারেন। কানে অস্বস্তি হতে পারে, শোঁ শোঁ শব্দও হতে পারে। এমনকি একদিন হঠাৎ করে আবিষ্কার করতে পারেন, কানে শুনতে অসুবিধা হচ্ছে। জমে থাকা ময়লার কারণে কানে জীবাণুর সংক্রমণও হতে পারে। দ্বিতীয়ত, ইয়ারপিসের ঘষা লাগার কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কানের পর্দা। এসব বিবেচনায় ইয়ারফোনের তুলনায় হেডফোন ব্যবহার করা নিরাপদ।

এসব অনুষঙ্গ কি একেবারেই বাদ

হেডফোন বা ইয়ারফোন নিরাপদভাবে ব্যবহার করা যায় কেবল নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দ শোনার জন্য। তা–ও মাঝেমধ্যে। অর্থাৎ, কেবল প্রয়োজনের সময়। জরুরি না হলে এগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। আর যখনই এসব অনুষঙ্গ ব্যবহার করা হোক না কেন, শব্দের মাত্রা রাখতে হবে হালকা। সারা দিন এক-দুই ঘণ্টার বেশি সময় হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার না করাই ভালো। তা ছাড়া প্রতি আধা ঘণ্টা পর মিনিট দশেকের বিরতি দেওয়াও ভালো অভ্যাস। মানসম্মত হেডফোন বা ইয়ারফোন বেছে নেওয়া উচিত। এসব অনুষঙ্গের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখা আবশ্যক।

অধ্যাপক ডা. এ এফ মহিউদ্দিন খান, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, নাক-কান-গলা ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল