আদা হলো একটি মসলা, যা বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময় করতে পারে আদা। মসলাটির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান জিঞ্জেরল, যাতে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। চলুন জেনে নিই এর ৯টি গুণ।
পেটে গ্যাস্ট্রিক রসের উৎপাদন বাড়ায় আদা, যা খাবারকে খুব দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিস্পাজমোডিক পেশির খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ করে।
এটি পাচনতন্ত্রের পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। আদায় আছে জিঞ্জেরল, শোগাওল, জিঞ্জেরোন। যা বমি বমি ভাব দূর করে, বিশেষ করে পেট ফোলা ভাব ও অস্বস্তি দূর করে।
প্রতিদিন আদা খেলে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। আদায় থাকা জিঞ্জেরল ও শোগাওল শরীরের প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ (এনকে বা ন্যাচারাল কিলার্স সেল) উৎপন্ন করে। এনকে সেল হলো শ্বেতরক্তকণিকা, যা দূষিত কোষ ও ক্যানসার কোষ ধ্বংস করে। জিঞ্জেরল শ্বেতরক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়ায়, এই যৌগ ম্যাক্রোফেজের উৎপাদনও বাড়ায়, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয়।
মাইগ্রেনের ব্যথায় ভুগছেন? প্রতিদিন আদা খান। এটি আপনাকে স্বস্তি দেবে। বহু শতাব্দী ধরে মাইগ্রেনের ব্যথায় ঘরোয়া টোটকা হিসেবে আদা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শরীরের প্রদাহ সৃষ্টিকারী এনজাইমগুলোকে বাধা দেয় আদা। এসব এনজাইমই মাইগ্রেনের জন্য দায়ী। আদা পেশি শিথিল করতে এবং রক্তনালিতে ফোলা ভাব কমাতেও সাহায্য করে। ব্যথা কমায়। শোগাওল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ হ্রাস করতে পারে। এটি আপনার মস্তিষ্কের সংবেদনশীল এলাকায় রক্তের প্রবাহ কমিয়ে মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
আদায় বিদ্যমান অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল শরীরের ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। গবেষণায় দেখা গেছে, আদা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। আদার রস টিউমারের বৃদ্ধি প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস করে এবং টিউমারের আকৃতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।
রক্তে উচ্চ শর্করার সমস্যায় বহু শতাব্দী ধরে আদা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আদা টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কারণ, আদার উপাদান জিঞ্জেরল ও শোগাওল অগ্ন্যাশয়কে আরও ইনসুলিন তৈরি করতে উদ্দীপ্ত করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উচ্চ ফাইবার এবং ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার খেলে উদ্বেগ কমে। আদায় এগুলো রয়েছে। উদ্বেগ কমানোর একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার হলো আদা।
বদহজম কার না হয়! এই বদহজমের অন্যতম প্রাকৃতিক প্রতিকার আদা। আদার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান জিঞ্জেরল খাবার হজমে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটা প্রদাহ রোধ করে, যা বদহজমের কারণে হওয়া ব্যথাও কমাতে সহায়তা করে। জিঞ্জেরল গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডের উৎপাদন কমায়, যা পেটের আলসার নিরাময়ও করতে পারে। বদহজম কমানোর ক্ষেত্রে আদা চা খেতে পারেন।
জিঞ্জেরল ফুসফুসের শ্বাসনালির পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। এটি ফোলা কমাতে এবং শ্বাস নেওয়া সহজ করে। আপনার যদি শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তাহলে আদা রস করে খেয়ে ফেলুন, শ্লেষ্মা দূর হবে।
আদা মস্তিষ্কে ফলক গঠনে বাধা দিয়ে আলঝেইমারের ঝুঁকি কমায়। ফলকগুলো হলো মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলোয় জমা হওয়া অ্যামাইলয়েড বিটা (এ-বিটা) পেপটাইড। পরীক্ষায় দেখা গেছে, আদার রস ৮০ শতাংশ পর্যন্ত এ-বিটা উৎপাদনে বাধা দেয়। এনজাইমগুলোকে বাধা দিয়ে মস্তিষ্কে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করে জিঞ্জেরল। এই এনজাইমগুলো মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি করে আলঝেইমারের ঝুঁকি তৈরি করে।
সূত্র: হেলথ নরমাল ডটকম