ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হলো নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কিছুটা সময় না খেয়ে থাকা। এটা হতে পারে সারা দিনের কিছুটা সময় না খেয়ে থাকা কিংবা সারা সপ্তাহের কয়েকটি দিন উপবাস থাকা। ওজন কমানোর জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা হলে অবশ্য যে সময়টায় না খেয়ে থাকা হচ্ছে, সেই সময় পানি কিংবা ক্যালরিবিহীন পানীয় খাওয়া যেতে পারে। এই পদ্ধতি কি ওজন কমাতে কার্যকর? কিংবা আদৌ নিরাপদ? এই পদ্ধতিতে ওজন কমাতে চাইলে কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে?
এসব বিষয়ে পরামর্শ দিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা
ওজন কমাতে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং একটি কার্যকর ও নিরাপদ উপায়, যদি আপনার শরীরে অন্য কোনো রোগ না থাকে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে ভুগলে খাদ্যাভ্যাসে এমনতর পরিবর্তন আনার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জেনে নিতে হবে, এটি আপনার জন্য নিরাপদ কি না। তবে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ অনায়াসেই তিন মাস সময়ের জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারে। তিন মাস বা তার কম সময়ের মধ্যে ওজন কমানোর কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা থাকলে তা পূরণের জন্য ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং দারুণ এক উপায়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে। একজন ব্যক্তির কখনোই প্রতি সপ্তাহে আধা কেজি থেকে এক কেজির বেশি ওজন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত নয়। সেই হিসাবে আপনি তিন মাসে সর্বোচ্চ বারো কেজি ওজন কমাতে পারবেন। এর বেশি ওজন কমাতে গেলে আপনি যে পদ্ধতিতেই আপনার খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করুন না কেন, তা আপনার শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই তিন মাসের ভেতর নিরাপদভাবে ওজন কমিয়ে এরপর স্বাভাবিক জীবনধারার মাধ্যমে তা ধরে রাখাটাই ওজন কমানোর বিজ্ঞানসম্মত উপায়। তবে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্বৈকল্য কিংবা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা উচিত নয়।
পদ্ধতির ভিন্নতা
প্রতিদিনের জীবনধারায় খানিকটা বদল এনে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করতে পারেন আপনি। এ ক্ষেত্রে দিন কিংবা রাতের একটি নির্দিষ্ট সময় ক্যালরি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। খাওয়ার সময়টাকে একটা গণ্ডির মধ্যে বেঁধে ফেললে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ এমনিতেই কমে আসে, যার ফলে ওজন কমে। চব্বিশ ঘণ্টার ভেতর আট, দশ, বারো বা চৌদ্দ ঘণ্টা আপনি কোনো ক্যালরি গ্রহণ না করে থাকতে পারেন। তবে বাকি সময়টা আবার অতিরিক্ত খাবেন না যেন। তাতে কিন্তু ওজন কমবে না।
সপ্তাহের হিসাবের বেলায়ও বিষয়টা এ রকমই। আপনি সপ্তাহে দুই দিন রোজা বা উপবাসের মতো সারা দিন না খেয়ে থাকতে পারেন। কিংবা এক দিন অন্তরও এমনটা করতে পারেন। যেদিন না খেয়ে থাকা হবে, সেদিন সন্ধ্যায় বা রাতেও যেন অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করা হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ, ওজন নিয়ন্ত্রণই যখন আপনার লক্ষ্য, তখন কোনো দিন কোনো বেলায় যাতে খাবার বেশি খেয়ে ফেলা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতেই হবে।
খেয়াল রাখুন
প্রতিদিন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে না খেয়ে থাকার সময়টাকে কাজের সময় হিসেবে বেছে নেওয়া উচিত নয়। অধিকাংশ মানুষের অফিস থাকে দিনে, সে ক্ষেত্রে রাতে না খেয়ে থাকা যেতে পারে।
যে সময়টুকু খাবেন, সেই সময় হোল গ্রেইন (অপরিশোধিত শস্য) এবং আঁশসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার খাওয়া ভালো। তাহলে বেশ কিছুটা সময় আর ক্ষুধা লাগে না। সারা দিনের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষ, স্নেহজাতীয় খাবার এবং ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে এই সময়, যাতে আপনি অপুষ্টিতে না ভোগেন।
তিন মাসের বেশি সময় ধরে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তাতে আপনার শরীরের বিপাক হার কমে যাবে। তখন ক্যালরি কম গ্রহণ করা হলেও ওজন কমবে না। তা ছাড়া শরীর দুর্বলও হয়ে পড়তে পারে।
তিন মাস নিরাপদে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করতে পারবেন ঠিকই, কিন্তু এ সময়ে যাতে আপনি পানিশূন্যতায় না ভোগেন, সেদিকেও খেয়াল রাখুন। আপনি যে সময় না খেয়ে থাকছেন, সেই সময়ের ভেতর পানি কিংবা দুধ-চিনি ছাড়া এক কাপ চা, কফি বা গ্রিন টি খেতে পারেন। তবে চা-কফির পরিমাণও রাখুন সীমিত। আবার ওই সময় তরল গ্রহণ না করলে বাকি সময়ে যাতে আপনার সারা দিনের পানির চাহিদা পূরণ হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
কেবল খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই যে ওজন নিয়ন্ত্রণ হবে, তা কিন্তু নয়। শরীরচর্চাও করতে হবে। অবশ্য যে সময় না খেয়ে থাকছেন, তার একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ব্যায়াম না করাই ভালো। ব্যায়ামের জন্য অন্য কোনো সময় বেছে নিন। উদাহরণ হিসেবে, আপনি যদি রাতে না খেয়ে থাকেন, তাহলে ভোরে একেবারে খালি পেটে শরীরচর্চা করবেন না।