নারীর হরমোনজনিত সমস্যা

পুরুষের চেয়ে নারীর হরমোনজনিত সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। বয়সভেদে নারীর বিভিন্ন হরমোনজনিত সমস্যা হতে দেখা যায়। যেমন শৈশব-কৈশোরে থাইরয়েড বা স্টেরয়েড বা গ্রোথ হরমোনের অসামঞ্জস্যের কারণে অনেকে খর্বকায় হয়, স্থূলকায় হয়ে পরে বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে সমস্যা হয়।

ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে অনেক ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তনগুলো বয়সের আগেই চলে আসে অথবা দেরিতে আসে। কৈশোরের সবচেয়ে পরিচিত সমস্যা পলিসিস্টিক ওভারি ডিজিজ। এর উপসর্গ হলো মুখে, পেটে, বুকে অবাঞ্ছিত লোম, সঙ্গে ব্রণ ও অনিয়মিত মাসিক। প্রজননক্ষম বয়সে এদের গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ কোলেস্টেরল দেখা দেয়।

  • থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগ পুরুষের তুলনায় নারীর ১০ গুণ বেশি হয়। এই হরমোনের মাত্রা রক্তে কমে গেলে তাকে হাইপোথাইরয়েডিজম বলে। হাইপোথাইরয়েডে ওজন বৃদ্ধি, দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, চুল পড়া, শুষ্ক ত্বক, স্মরণশক্তি ও বুদ্ধি কমে যাওয়া, পা ফোলা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। আর শরীরে থাইরয়েড হরমোন বৃদ্ধির কারণে বুক ধড়ফড়, অস্থিরতা, ওজন হ্রাস, ডায়রিয়া ও চোখ বের হয়ে আসার মতো অবস্থা হয়। থাইরয়েডের এই দুই ধরনের সমস্যাতেই অনিয়মিত মাসিক ও পরে গর্ভধারণে সমস্যা দেখা যায়।

  • হাইপার প্রোল্যাকটিনেমিয়া আরেকটি হরমোনজনিত রোগ, যেখানে প্রোল্যাকটিন হরমোন বেড়ে যায়। মস্তিষ্কে পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার বা বিশেষ কিছু ওষুধের জন্য এ সমস্যা হয়। এর উপসর্গ হলো বিবাহিত বা অবিবাহিত মেয়েদের স্তন থেকে দুধ নিঃসৃত হওয়া, মাসিক বন্ধ বা অনিয়মিত হওয়া এবং পরে গর্ভধারণে সমস্যা হওয়া।

  • কুশিং সিনড্রোম নামের হরমোনের অসুখে রোগী মুটিয়ে যায়, চামড়া পাতলা হয়ে যায়, ফাটা দাগ হয়, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে ও হাড় ক্ষয় দেখা দেয়। শরীরে কোনো টিউমার বা কোনো অসুখের কারণে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অনেক দিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খেলে এই রোগ হয়।

  • মেনোপোজও একটি হরমোনজনিত সমস্যা। এতে প্রাকৃতিকভাবে ঋতুস্রাব সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং নারীরা আর গর্ভধারণে সক্ষম থাকেন না। মেনোপোজ সাধারণত ৪৯ থেকে ৫২ বছর বয়সে হয়ে থাকে। এ সময় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের ঘাটতির কারণে নারীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। সব নারীর ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ সমানভাবে প্রকাশ পায় না। একধরনের গরম ভাব বা দেহে উষ্ণতা অনুভব হয়, যা মুখমণ্ডলের দিকে ছড়িয়ে যায়। এটি হট ফ্লাশ নামে পরিচিত। এর সঙ্গে কাঁপুনি, অতিরিক্ত ঘাম, অস্থিরতা, ত্বক লালচে হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ থাকতে পারে। এ সময় যোনিপথের শুষ্কতা, যৌনমিলনে ব্যথা অনুভব করা, প্রস্রাব আটকে রাখার অক্ষমতা, ওজন বৃদ্ধি, স্তনের আকার বৃদ্ধি ও ব্যথা, জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড়, নিদ্রাহীনতাসহ নানা রকম মানসিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।

  • তবে সব ধরনের হরমোনের সমস্যার আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। সঠিক সময়ে হরমোন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করলে নারীর হরমোনজনিত জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব।

ডা. রেজওয়ানা সোবহান, সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল