শিশুদেরও হতে পারে লুপাস

লুপাস একটি অটোইমিউন রোগ। এতে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কোষ আক্রান্ত হয়। এ রোগের মধ্যে কিডনির লুপাস বা লুপাস নেফ্রাইটিস অন্যতম। ২০ থেকে ৭৫ শতাংশ লুপাস রোগীর কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। বড়দের (৩৪ থেকে ৬৭ শতাংশ) ক্ষেত্রে এর প্রবণতা বেশি। তবে শিশুদেরও হতে পারে এই জটিল রোগ।

কিডনির পাশাপাশি শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র, রক্তরোগ, চামড়ার ক্ষত, গিরা, মাংসপেশি, ফুসফুস, হৃদ্‌যন্ত্র, এমনকি চুল পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে। ছোটদের ক্ষেত্রে লুপাস সাধারণত ১১-১২ বছর বয়সে হতে পারে। পাঁচ বছরের নিচে এটি কম হতে দেখা যায়। তবে নবজাতকও আক্রান্ত হতে পারে। মেয়েশিশুর মধ্যে এ রোগের হার বেশি।

কারণ

  • লুপাসের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে কিছু বিষয় যেমন বংশগত ও পরিবেশগত প্রভাব, ভাইরাসের সংক্রমণ, হরমোনজনিত প্রভাব রোগের বিস্তার এবং তীব্রতা প্রভাবিত করে।

  • এটি মূলত অটোইমিউন ডিজঅর্ডার। শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার ত্রুটির জন্য। যখন রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ শুরু করে ও প্রদাহ সৃষ্টি করে তখন রোগটি ঘটে।

উপসর্গ

দীর্ঘদিন ধরে জ্বর, প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ, চুল পড়া, মুখে ঘা, রোদে সংবেদনশীলতা, সারা শরীরে লালচে ক্ষত, ওজন কমে যাওয়া, প্রস্রাবের রং পরিবর্তন, তলানি জমা, শরীর ফুলে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, গিরাব্যথা বা ফুলে যাওয়া, মাথাব্যথা এ ছাড়া দেখতে অসুবিধা, খিঁচুনি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা ইত্যাদি।

রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা

লক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগনির্ণয় সম্ভব। রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, কিডনির টিস্যু পর্যবেক্ষণ করতে হতে পারে।

এই রোগের চিকিৎসা দীর্ঘদিন বা জীবনব্যাপী চালিয়ে যেতে হবে। রোগের কোনো স্থায়ী নিরাময় নেই। চিকিৎসার লক্ষ্য, এর তীব্রতা কম রাখা বা রোধ করা এবং অঙ্গগুলো আরও ক্ষতি থেকে রক্ষা করা। কিডনির টিস্যু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগটি কোন পর্যায়ে আছে, তা বের করা ও পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। কিছু ওষুধ সারা জীবন সেবন করা উচিত; যাতে রোগ জটিলতর না হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

শেষ কথা

লুপাস রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনি, স্নায়ুতন্ত্রসহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়ে এগুলোর কার্যক্রম হ্রাস পেতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা নিলে লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

  • অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়