চলে এসেছে ডিসেম্বর, শিশুদের পরীক্ষা শেষ। সপরিবার বেড়াতে যাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই পিছিয়ে যেতে হয় ভ্রমণে শিশুদের বিভিন্ন সমস্যার কথা মনে হলে। সবাই মিলে রোমাঞ্চকর আনন্দময় ভ্রমণের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, কিছুদূর না যেতেই শিশু বলছে, ‘মা, আমার খরাপ লাগছে!’ অনেক শিশুই ভ্রমণ সহ্য করতে পারে না, গাড়িতে উঠলেই বমি করে। কারও পেটে কেমন করে, কারও মাথা ঘোরে। এই ধরনের সমস্যাকে ‘মোশন সিকনেস’ বলা হয়। ভ্রমণে কারও, বিশেষ করে শিশুরা এ রকম অসুস্থ হয়ে গেলে ভ্রমণের আনন্দটাই মাটি হয়ে যায়।
কাদের বেশি হয়?
মোশন সিকনেস থাকলে বাস, গাড়ি, ট্রেন, স্টিমার, লঞ্চ—যেকোন যানবাহন চলার কিছু সময়ের মধ্যেই মাথা ঘোরা, বমি বমি লাগা বা কখনো বমি হয়ে যায়। যেকোন বয়সেই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে দুই বছরের নিচে শিশুদের এই সমস্যা তেমন একটা দেখা দেয় না। আবার ৩-১২ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি এই সমস্যার মুখোমুখি হয়।
কেন হয়?
সাধারণত যানবাহন চলতে শুরু করলে অন্তঃকর্ণের এন্ডোলিম্ফ নামের তরল পদার্থে নড়াচড়া শুরু হয়। সেখান থেকে চলনশীলতার সংকেত যায় মস্তিষ্কে। কিন্তু চলন্ত অবস্থায় বাচ্চার দৃষ্টি গাড়ির ভেতরেই স্থির থাকে, তখন চোখ সংকেত দেয় স্থির অবস্থানের। ফলে মস্তিষ্ক, চোখ আর অন্তঃকর্ণের সংকেতের মধ্যে বিভ্রান্তিকর অসামঞ্জস্য তৈরি হয়, যে কারণে শিশুর বমি বমি ভাব হয়। গাড়ির ভেতরে আবদ্ধ বা ভ্যাপসা ভাব থাকলে এই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।
লক্ষণ কী
‘মোশন সিকনেস’ শুরু হয় পেটের মধ্যে গোলানো ভাব দিয়ে, কোনো ক্ষেত্রে ঘাম দিয়ে শিশু দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে বমি করে দিতে পারে। কখনো কখনো শিশুরা ঠিকমতো বর্ণনাও করতে পারে না, ঠিক কেমন লাগছে। অস্থির হয়ে কান্নাকাটি করে তারপর বমি করে দিতে পারে।
দুশ্চিন্তায় ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করার কোনো কারণই নেই। সাধারণত গাড়ি চলা বন্ধ হলেই বমি বমি ভাব আর হবে না। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিচের চেষ্টাগুলো করা যেতে পারে—
যাত্রাপথ বেশি দীর্ঘ হলে রাস্তায় মাঝেমধ্যে যাত্রাবিরতি দিতে হবে।
যাত্রার শুরুতে শিশুকে হালকা খাবার দেওয়া যেতে পারে। ভারী খাবার দিয়ে পেট ভর্তি করে যাত্রা, অথবা একেবারে খালি পেটে বা ক্ষুধা নিয়ে যাত্রা—দুটিই বমি ভাব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মোশন সিকনেসের অস্বস্তিকর অনুভূতি থেকে শিশুর মনোযোগ সরানোর জন্য তার সঙ্গে গল্প করা যেতে পারে, গান শোনানো যেতে পারে।
জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখানো যেতে পারে, এতে শিশু আনন্দ পাবে, মোশন সিকনেসও কিছুটা কমবে।
অনেকের ক্ষেত্রে বই, পত্রিকা ইত্যাদি পড়তে থাকলে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়, সেক্ষেত্রে যাত্রাপথে এই অভ্যাস পরিহার করাই ভালো।
গাড়ির ভেতর পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা মোশন সিকনেস কমাতে ভূমিকা রাখে। তাই বমিভাব লাগলে জানালাটা খুলে দিলেও ভালো লাগবে।
যদি এসবের কোনটাই কাজে না আসে, তবে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে কাঁধে বা কোলে মাথা রেখে শুইয়ে দেওয়া যেতে পারে। তন্দ্রাচ্ছন্নভাব কিছুটা উপকারে আসতে পারে।
বেশ কিছু ওষুধ আছে, যা এই সমস্যায় বেশ কার্যকর। যদি আগে থেকেই জানা থাকে যে শিশুর মোশন সিকনেস আছে, তাহলে ভ্রমণ পরিকল্পনার শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা যেতে পারে। ওষুধগুলো ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করানোটাই ভালো।