ধূমপান ছাড়ার কথা বলতে গেলেই আমরা সবাই হয়ে যাই একেকজন ‘মার্ক টোয়েন’। মার্ক টোয়েন ধূমপান ছাড়া সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘ধূমপান ছাড়া তো খুবই সহজ একটা কাজ। আমি এখন পর্যন্ত বহুবার ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি।’
সিনেমার শাহরুখ খানের সিগারেট ধরার স্টাইল দেখেই হোক, আর বন্ধুদের আড্ডায় নিজেকে বড় দেখানোর অদম্য কৌতূহল থেকেই হোক, অন্য যেকোনো বয়সের চেয়ে ইউনিভার্সিটির তরুণদের মধ্যে ধূমপানের পরিমাণটা একটু বেশিই থাকে। গবেষণা বলছে, আমেরিকার বেশির ভাগ ধূমপায়ীরাই তাঁদের প্রথম ধূমপানটা করে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে। তবে একটু হলেও স্বস্তির খবর হলো, ক্যাম্পাসের ধূমপায়ীদের ১০ জনের ৭ জনই নিয়মিত ধূমপায়ী নন। বরং তাঁরা বিশেষ আড্ডায় বা বিশেষ অনুষ্ঠানের সময় ধূমপান করে থাকেন।
কিন্তু খারাপ অভ্যাস তো খারাপই, তা–ই না? এই অভ্যাস যদি আমরা এখানেই শেষ করে দিতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে এই ধূমপানের অভ্যাস যে আপনার সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে যাবে না, সেই নিশ্চয়তা আপনাকে কে দেবে?
ধূমপান ছাড়ার কথা বলতে গেলেই আমরা সবাই হয়ে যাই একেকজন ‘মার্ক টোয়েন’। মার্ক টোয়েন ধূমপান ছাড়া সম্বন্ধে বলেছিলেন, ‘ধূমপান ছাড়া তো খুবই সহজ একটা কাজ। আমি এখন পর্যন্ত বহুবার ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি।’
আমরাও অনেকেই ধূমপান ছাড়ি, তবে ওই মার্ক টোয়েনের মতো করেই ছাড়ি। আজ ছেড়ে, কাল ধরি, আবার সাত দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বসলেই অজান্তেই সিগারেট উঠে আসে হাতে। এটা থেকে বাঁচার উপায় কী?
প্রথম উপায় হলো, ইচ্ছা। দেখেন, আগে আপনাকে স্বীকার করে নিতে হবে যে ধূমপান আপনার জন্য খারাপ এবং আপনি এটা ছাড়তে চান। এরপর আরও একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, যেকোনো অভ্যাসের মতো ধূমপানের অভ্যাস ছাড়াটাও অনেক কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। নির্দিষ্ট একটা কাঠামোর মধ্যে দিয়ে গেলে প্রথমে কিছুদিন কষ্ট হবে, কিন্তু দিনশেষে আপনি ধূমপান ছাড়তে পারবেনই। আসুন, দেখে নিই, ধূমপান ছাড়তে আপনার কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে।
১. আজ, এখনই
সবার আগে মনস্থির করুন। আমার এক কলিগ নাকি এক রাতের সিদ্ধান্তেই ১৭ বছরের অভ্যাস ধূমপান ছেড়েছেন। কীভাবে? জানতে চাইলে বললেন, ‘করোনা থেকে সেরে ওঠার পর থেকে পেটে ব্যথা করত। ডাক্তার বলেছিল, ফুসফুসের অবস্থা বিশেষ ভালো না। প্রথম দুই দিন ধূমপান ছেড়ে দেখলাম, ভালোই তো, প্রতিদিন দিব্যি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেঁচে যাচ্ছে। তাই আর ইচ্ছাও করেনি। এখন পেটে ব্যথা, হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটির সমস্যা—এগুলো কিছুই নেই।’
ধূমপান ছাড়ার মনস্থির করে ফেললেই মনে করুন ৫০ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। ‘কাল করব বা পরে করব অথবা বিশেষ দিন থেকে শুরু করব’—এমন অজুহাত দেখাবেন না। বরং এই মুহূর্তেই পকেটে থাকা সিগারেটের প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলে দিন। এটা আপনাকে মানসিকভাবে এগিয়ে দেবে অনেকখানি।
২. জামাকাপড় পরিষ্কার করে ফেলুন
মনে রাখতে হবে, আপনি একটা যুদ্ধে আছেন। এখানে আপনি দুর্বল হতে পারেন, এমন কোনোকিছুই রাখা যাবে না। কাজেই, কাপড়চোপড়ে লেগে থাকা সিগারেটের গন্ধ যাতে আপনাকে দুর্বল করে ফেলতে না পারে, সে জন্য কাপড়চোপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। অ্যাশ ট্রে ফেলে দিন। যেসব বন্ধুরা ধূমপান করে, সাময়িকভাবে তাঁদের সঙ্গ ছাড়ুন। যেসব জায়গায় সবাই ধূমপান করেন, সেখানে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. নিজের ট্রিগার পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করুন
যেকোনো অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ হয় কিছু ট্রিগার দ্বারা। খেয়াল করুন, ঠিক কখন কখন আপনার ব্রেইন সিগারেটের জন্য পাগল হয়ে এঠে? কাজের চাপে? পরীক্ষার চাপের সময়? গভীর রাতে দুঃখের গান শোনার সময়? নাকি দুপুরের খাবারের পর পর? এই সময়গুলো অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, প্রয়োজনে চাপ এড়াতে হবে। রাত জাগা বন্ধ করতে হবে। যখন খুব বেশি সিগারেট খেতে ইচ্ছা করে, তখন চকলেট, চুইংগাম, যষ্টিমধু বা আদা–লবঙ্গ চিবাতে পারেন।
৪. শূন্যতাকে গ্রহণ করে নিন
যেকোনো জিনিস জীবন থেকে হারিয়ে গেলে যেমন শূন্য শূন্য লাগে, সিগারেট ছাড়তে গেলেও তেমন কিছু প্রভাব পড়ে। মাথাব্যথা, অস্থিরতা বা বিষণ্নতা খুব সাধারণ একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এটাকে সহ্য করতে পারতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই প্রভাব খুব বেশিদিন স্থায়ী হবে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে। ধৈর্য ধরার কোনো বিকল্প নেই।
৫. ব্যস্ত থাকুন
সিগারেট ছাড়ার জন্য অনেক সময়ই পরামর্শ দেওয়া হয়, বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার না, বরং রোববার থেকে ধূমপান ছাড়া শুরু করুন। কারণ, একটা কর্মব্যস্ত সপ্তাহ আপনাকে সিগারেটের তাড়না থেকে দূরে রাখতে পারে অনেকখানি।
৬. ভুল থেকে শিক্ষা নিন, হতাশা নয়
এতকিছুর পরেও বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে দুই–এক টান দিয়েও ফেলতে পারেন টংয়ের আড্ডায়। এতেই হতাশ হয়ে চেষ্টা বাদ দিবেন না। বরং এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের টানটা যাতে আর না দেন, সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই হতাশ হওয়া চলবে না।
৭. নিজেকে পুরস্কার দিন
ছোট ছোট লিখিত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। হতে পারে সেটা ৩ দিন, ৭ দিন বা ১০ দিনের। এরপর সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারলে টিক চিহ্ন দিন এবং নিজেকে ছোটখাটো পুরস্কার দিন। এতে আপনি পরের লক্ষ্য অর্জনে আরও বেশি চেষ্টা করার শক্তি পেয়ে যাবেন।
৮. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন
প্রচুর পানি, ফল, শাকসবজি খান। ভোরের রোদে হাঁটুন। ‘সকাল সকাল’ ঘুমিয়ে পড়ুন। পরিবারের সঙ্গে একাত্ম থাকুন। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
যেহেতু আপনি এই লেখাটা পড়ছেন, সেহেতু আপনি ধূমপান ছাড়ার প্রথম পদক্ষেপটা ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন। কাজেই, আরেকটু সাহস করে পরের পদক্ষেপগুলোও নিয়ে ফেলতে পারলে ধূমপানমুক্ত জীবন আপনার পক্ষেও সম্ভব। একটু কষ্ট করলেই যদি আপনার শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সুন্দর একটা জীবনযাপন করা যায়, তবে সেই কষ্ট করতে ক্ষতি কী?
সোর্স: টোবাকো ফ্রি লাইফ, টিনস হেলথ