ঘাড়ে ব্যথা কেন হয়? কী করবেন?

ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্তও বিস্তৃত হতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

  • সারভাইক্যাল স্পনডিইলোসিস

  • সারভাইক্যাল স্পনডিইলাইটিস

  • সারভাইক্যাল স্পনডিইলিসথেসিস

  • সারভাইক্যাল রিবস

  • সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া

  • সারভাইক্যাল ডিস্কা প্রলেপস বা হারনিয়েশন

  • মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি

  • অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে নিদ্রা বা অনিদ্রা

  • উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ

  • হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ ও ক্ষয়

  • অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়

  • হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া

  • রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস

  • সারভাইক্যাল অস্টিওআর্থ্রাইটিস

  • ফাইব্রোমায়ালজিয়া; সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা

  • হাড়ের সংক্রমণ

  • ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)

  • পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে ডেস্কে বসে কাজ করা

  • কম্পিউটারে কাজ করা

  • টেলিফোন অপারেটরের কাজ

  • ছাত্রছাত্রীর চেয়ারে বসে পড়াশোনা করার সময় ঘাড় ও মাথার অবস্থান ঠিকমতো না হওয়া বা উপুড় হয়ে শুয়ে বই পড়া

  • ড্রাইভিং করার সময় ঘাড় ও মাথা সঠিকভাবে না থাকা

  • বুক ও পেটের মধ্যকার বিভিন্ন অঙ্গের সমস্যা (যেমন পিত্তথলির পাথর, ডায়াফ্রাম ইরিটেশন ইত্যাদি); হাড় ও স্নায়ুর টিউমার, টরটিকলিস ইত্যাদি।

উপসর্গ

  • ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্তও বিস্তৃত হতে পারে। কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশভাব।

  • ঘাড় জমে আছে এমন অনুভূতি। ঘাড়ের নড়াচড়া ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া।

  • ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলা বা অতিরিক্ত কাজের পর তীব্র ব্যথা। হাঁচি-কাশিতে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যাওয়া।

  • ঘাড়ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে সামনেও আসতে পারে। ব্যথার জন্য ঘুম ভেঙে যেতে পারে। ব্যথার সঙ্গে জ্বর, ঘাম, শীত ভাব বা শরীর কাঁপানো ইত্যাদি লক্ষণও থাকতে পারে।

চিকিৎসা

  • কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথানাশক ওষুধ সেবন, ২. ফিজিওথেরাপি। ফিজিওথেরাপিতে বিভিন্ন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ করানো হয়। কখনো দুই থেকে তিন সপ্তাহ সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে চিকিৎসা নিতে হতে পারে।

  • সার্জিক্যাল চিকিৎসা: স্বাভাবিক চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশভাব দেখা দিলে কিংবা প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রতিরোধ

  • সামনে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ না করা। মাথার ওপর কোনো ওজন না নেওয়া।

  • শক্ত বিছানায় ঘুমানো। মধ্যম আকারের বালিশ ব্যবহার, যার অধের্ক মাথা ও অর্ধেক ঘাড়ের নিচে থাকবে।

  • তীব্র ব্যথা কমলেও ঘাড় উঁচু-নিচু করা অথবা মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।

  • সেলুনে কখনো ঘাড় না মটকানো।

  • কাত হয়ে শুয়ে পড়া বা টেলিভিশন না দেখা।

  • কম্পিউটারের মনিটর চোখের লেভেলে রাখা।

  • ব্যথা হলে গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে সেঁক দেওয়া।

  • ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করা।

  • ভ্রমণকালে সার্ভাইক্যাল কলার ব্যবহার।

  • এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা