একসময় বলা হতো গরমে সুস্থ থাকতে পানসে সবজি, টক, খাট্টা, শুক্তো, তেঁতো—এগুলো বেশি খেতে হবে। আসলেই কি এগুলো গরমে প্রশান্তিদায়ক? চলুন দেখি, এ কথার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কী।
গরমে ঘামের সঙ্গে দেহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড বেরিয়ে গিয়ে অনেক জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই এ সময় ডাবের পানি, কলা, স্যালাইন, আখের গুড়ের শরবত, লেবুর শরবত, তেঁতুলের পাতলা পানি, কাঁচা আমের শরবত বেশি খেতে হবে।
স্টার্চ ও জটিল শর্করা
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে পানিজাতীয় খাবারের পাশাপাশি যেসব খাবার দেহে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে, সেসবের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেমন জটিল শর্করা ও স্টার্চ—ওটস, লাল চিড়া। এগুলো দীর্ঘক্ষণ দেহকে ঠান্ডা রাখে। এ ছাড়া ইসবগুল, চিয়া সিড, তোকমা দানা, বার্লি এগুলোর ওজনের তিন গুণ পানি শোষণ করে দেহ ঠান্ডা রাখে।
পানসে সবজি
যেসব সবজিতে পানি বেশি, যেমন লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া, পটোল, চিচিঙ্গা, শসা, টমেটো, ধুন্দল—বেশি খেতে হবে। অনেকেই আমরা জানি না যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলিতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি; প্রায় ৯১-৯২ শতাংশ। তাই এসব সবজিও প্রাধান্য দিতে হবে।
পানসে ফল
তরমুজ, নাশপাতি, ডালিম, আপেল, পাকা পেঁপে, ঘরে তৈরি আখের রস, আঙুর, আনারস, কমলা, মাল্টা, স্ট্রবেরি বেশি খেতে হবে। গরমে যখনই ফলের রস খাবেন, সঙ্গে এক টেবিল চামচ তোকমা বা ইসবগুল মিশিয়ে খান; দেহ অনেকক্ষণ ঠান্ডা থাকবে।
প্রোবায়োটিক
গরমে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকে রাস্তার পাশে বিভিন্ন পানীয় পান করেন। এতে বিভিন্ন হজমজনিত সমস্যা ও পানিবাহিত রোগ, যেমন টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, ডায়রিয়া, আমাশয়, বদহজম ইত্যাদি বেড়ে যায়। তাই প্রোবায়োটিক (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) সমৃদ্ধ খাবার, যেমন টক দই, মাঠা, আপেল, ইসবগুল বেশি খেতে হবে। ডাবের পানি, কাঁচা কলা, পেঁপে, চিয়া সিড, আদা, হলুদ চা, জিরাপানি, তুলসী চা, বার্লি, ওটস, মধু ও লাল খাবারও ভালো কাজ করে। ঝিঙে, চিচিঙ্গা, করলা, ধুন্দল, শসা, পটোল ইত্যাদি সবজিও পেটের সমস্যায় বেশ উপকারী।
ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ টক ফল
গরমে অতিরিক্ত ঘেমে অনেকে ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, গলাব্যথায় আক্রান্ত হন। এ সময় ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ টক ফল ও সবজি, যেমন কমলা, মাল্টা, আনারস, পেয়ারা, ক্যাপসিকাম বেশ ভালো কাজে দেয়। এ ছাড়া গরম স্যুপ, গ্রিন টি, তুলসী চা, আদা চা বা যেকোনো হারবাল চা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা নিরাময়ে বেশ কার্যকর। গরম পানিতে হালকা মধু, আদা, পুদিনা, দারুচিনি, লবঙ্গ ইত্যাদি মসলা দিয়ে খেলেও ভালো ফল পাবেন।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল খাবার
গরমে প্রস্রাবের সংক্রমণ খুব হয়। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল খাবার, যেমন দারুচিনি, রসুন, মধু খুব ভালো কাজ করে। পুদিনা ও আদা দেহ ঠান্ডা রাখে। তাই এগুলো খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।
এ গরমে অতিরিক্ত মসলা, তেল, ভাজাপোড়া, টেস্টিং সল্ট দেওয়া খাবার, রাস্তার খোলা খাবার অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে।
আগামীকাল পড়ুন: শিশুদের গ্রোয়িং পেইন