পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিসের প্রধান কারণ মস্তিষ্কের স্ট্রোক। মস্তিষ্কের রক্তনালির মধ্যে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে এই রোগ হয়।
স্ট্রোক হলে আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক চলনক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। শরীরের কোনো এক দিক বা হাত–পা অবশ হয়ে পড়ে। কখনো কখনো খাবার খেতে ও কথা বলতে সমস্যা হয়।
বিশ্বে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে মারা যান। বয়স্ক ব্যক্তিদের নিশ্চল বা শয্যাশায়ী হয়ে পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে স্ট্রোক।
মস্তিষ্কের ভিন্ন ভিন্ন জায়গা শরীরের ভিন্ন ভিন্ন অংশের কাজের জন্য নির্দিষ্ট থাকে। তাই মস্তিষ্কের কোথায় কতটুকু আক্রান্ত হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে স্ট্রোকের উপসর্গ।
স্ট্রোকের পর শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়। মাংসপেশির টোন বা স্থিতিস্থাপকতা প্রাথমিক পর্যায়ে কমে যায়। পরে আস্তে আস্তে টোন বাড়তে থাকে অথবা হাত ও পায়ের মাংসপেশি দুর্বল ও নরম হয়ে যায়। হাত ও পায়ে ব্যথা থাকতে পারে। নড়াচড়া আংশিক বা সম্পূর্ণ কমে যেতে পারে। দীর্ঘদিনের অব্যবহারের কারণে মাংসপেশি শুকিয়ে অথবা শক্ত হয়ে যেতে পারে। কথা বলা বা খাবার খেতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসার পর এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে একজন বিশেষজ্ঞ নিউরোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্টসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত টিমের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।
ওষুধপথ্য স্ট্রোকের রোগীকে ঝুঁকিমুক্ত করলেও শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে পারে না। স্ট্রোক-পরবর্তী নানা সমস্যা দূর করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা।
চেস্ট থেরাপির মাধ্যমে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করা।
সঠিক পজিশনিংয়ের মাধ্যমে বেডশোর প্রতিরোধ করা।
অ্যাকটিভ ও প্যাসিভ টেকনিকের মাধ্যমে মাংসপেশির স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বজায় রাখা।
বেড মবিলিটি টেকনিকের মাধ্যমে রোগীকে বিছানায় শোয়া থেকে বসানো ও দাঁড়ানোর অভ্যাস করা।
প্যাসিভ মুভমেন্টের মাধ্যমে মাংসপেশির স্বাভাবিক টান ফিরিয়ে আনা
শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধির স্বাভাবিক নাড়ানোর ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা।
ব্যালান্স ও কো-অর্ডিনেশন টেকনিকের মাধ্যমে এগুলো উন্নত করা।
রোগীর কর্মদক্ষতা বাড়ানো।
রোগীর মানসিক অবস্থা উন্নত করা।
রোগীর অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তাঁকে হুইলচেয়ার, ক্রাচ, ফ্রেম বা স্টিক ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখতে হবে।
মো. আলতাব হোসেন, বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা