রক্তের গ্রুপ মানুষের খুব জরুরি তথ্য। আকস্মিক বিপদে যেমন একই গ্রুপের মানুষকে রক্ত দিতে হতে পারে, তেমনই মা–বাবার পজিটিভ-নেগেটিভ গ্রুপের কারণে সন্তানের জীবনও হতে পারে সংকটাপন্ন। তা ছাড়া নির্দিষ্ট কিছু গ্রুপের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকিও থাকে বেশি।
ধরে নেওয়া যাক, দুর্ঘটনায় কারও প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। জীবন বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন। এদিকে তাঁর রক্তের গ্রুপ জানা নেই। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির কাছের মানুষেরা কিন্তু চাইলেও চট করে রক্তদাতার খোঁজ করতে পারবেন না। হাসপাতালে নেওয়ার পর জীবন বাঁচানোর অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি গ্রুপ পরীক্ষার জন্য তাঁর রক্ত নেওয়া হবে। তবে সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার আগে পেরিয়ে যাবে মূল্যবান বেশ খানিকটা সময়। তাই নিজের রক্তের গ্রুপ জেনে নিন এবং কাছের মানুষদের তা জানিয়েও রাখুন।
কাছের মানুষ কিংবা নিতান্তই অপরিচিত কোনো মানুষের জীবন বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন হয় রোজই। মানবিক কারণেই এগিয়ে যেতে চান আপনি। কিন্তু নিজের রক্তের গ্রুপ জানেন না। মুমূর্ষু ব্যক্তির স্বজনদের সহায়তায় ব্লাড ব্যাংক পর্যন্ত পৌঁছালেনও। পরীক্ষা করে জানা গেল, রক্তের গ্রুপ মিলছে না। আসলে কোনো ব্যক্তি রক্তদাতা হিসেবে কোথাও রক্ত দিতে গেলে অনেক কিছুই পরীক্ষা করে দেখতে হয়। তার মধ্যে প্রথম ধাপ হলো, রক্তের গ্রুপ মেলে কি না, তা দেখা। ভুল গ্রুপের রক্তদাতা নিয়ে গেলে সেখানেও কিন্তু অকারণ কালক্ষেপণ হয়।
স্ত্রীর রক্ত যদি নেগেটিভ গ্রুপের হয়, আর স্বামীর হয় পজিটিভ, সে ক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপের মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে গর্ভের সন্তানের ওপর। এ ক্ষেত্রে সন্তান যদি নেগেটিভ গ্রুপের হয়, তাহলে অবশ্য ভয় নেই, কিন্তু সন্তান পজিটিভ গ্রুপের হলেই বিপদ। সন্তানের রক্ত পজিটিভ গ্রুপের হলে পজিটিভ রক্তের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায় মায়ের শরীরে। পরবর্তীবার সন্তান ধারণ করলেও যদি সন্তানের রক্ত পজিটিভ গ্রুপের হয়, তখন ওই অ্যান্টিবডি পরবর্তী সন্তানের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, এমনকি এই সন্তান মারাও যেতে পারে। এমন সমস্যা এড়াতে নেগেটিভ গ্রুপের মায়ের পজিটিভ গ্রুপের সন্তান জন্মের পর মাকে এমন ইনজেকশন দেওয়ার সুযোগ আছে, যাতে পরবর্তী সময় সন্তানকে বিপদ থেকে নিরাপদ রাখা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই সুফল পেতে হলেও কিন্তু রক্তের গ্রুপ জানা থাকতেই হবে।
রক্তের গ্রুপ ‘এ’, ‘বি’ কিংবা ‘এবি’ হলে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা বেশি হতে পারে, যার ফলে রক্ত জমতে পারে পায়ের রক্তনালিতে। এ ঘটনা অবশ্য তখনই ঘটে, যখন দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্যক্তিকে কোনো কারণে হাঁটাচলা বন্ধ রাখতে হয়। এমন জমাট বাঁধা রক্ত পায়ের রক্তনালি থেকে ছুটে গিয়ে ফুসফুসে পৌঁছালে জীবন বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। এই তিন গ্রুপের মধ্যে হৃদ্রোগের ঝুঁকিও বেশি।
যাঁদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’ কিংবা ‘এবি’, তাঁদের পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
‘এবি’ গ্রুপের মানুষদের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি।
‘ও’ গ্রুপের রক্তের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকে।
মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে ‘ও’ গ্রুপের নারীদের।
মশা ‘ও’ গ্রুপের রক্তের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। তবে ‘ও’ গ্রুপ ছাড়া বাকিরা যে মশার কামড় থেকে একেবারে নিরাপদ, তা বলা যাবে না।
তবে মনে রাখবেন, রক্তের গ্রুপের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্যকর জীবনধারা। রক্তের গ্রুপের কারণে আপনি যেসব সমস্যার ঝুঁকিতে আছেন, সেসব প্রতিরোধে জীবনধারা রাখতে হবে ঠিকঠাক। আবার ঝুঁকি কম আছে ভেবে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করলে সেই জীবনধারার নেতিবাচক প্রভাব থেকে আপনি রক্তের গ্রুপের কল্যাণে বাঁচতে পারবেন না। তাই রক্তের গ্রুপ যেটাই হোক, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, লবণ ও চিনি কম খান, শরীরচর্চা করুন আর মনের যত্ন নিন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট