পুরুষের যৌন দুর্বলতার কারণে সমাজে বিবাহবিচ্ছেদ বেড়েই চলেছে। এ লেখার উদ্দেশ্য জনসচেতনতা সৃষ্টি ও কিছু ভুল ধারণা খণ্ডন করা।
আমাদের দেশে পাশ্চাত্যের মতো হাইস্কুল-কলেজগুলোতে কেতাবি সেক্স এডুকেশনের ব্যবস্থা নেই। তাই অনেক ভুল ধারণা ও বিশ্বাস নিয়ে তরুণ-তরুণীদের সংসার জীবনে প্রবেশ করতে হয়। দাম্পত্য জীবনের যেসব শারীরিক সমস্যা প্রধানত দেখা যায়, তা দুই ধরনের—উত্থানজনিত বা ইরেকটাইল ডিজফাংশন (ইডি) ও দ্রুত বীর্যপাতজনিত বা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন (পিই)।
ইরেকটাইল ডিজফাংশন পুরুষাঙ্গে রক্ত চলাচল ও নার্ভের সমস্যা অথবা উভয় সমস্যা থেকে হয়ে থাকে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ এ সমস্যার কারণ হতে পারে। এসব রোগ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আরেক ধরনের অক্ষমতাকে সাইকোজেনিক ইমপোটেন্স বলা হয়। এটি কিন্তু বিবাহের পরপর প্রায়ই দেখা যায়। এটি মূলত সাইকোলজিক্যাল বা নার্ভাসনেসের কারণে হয়ে থাকে। কিছু সাপোর্টিভ চিকিৎসায় অল্প দিনেই এটি ভালো হয়।
দ্রুত বীর্যপাত (পিই) আমরা তখনই বলি, যখন এক মিনিটের মধ্যে এটি ঘটে যায়। তবে এটিকে দীর্ঘায়িত করার চিকিৎসা আছে।
আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, যে কারণে অনেকে এসব সমস্যায় নানা হারবাল ও অপচিকিৎসার শিকার হন। পুরুষের এ ধরনের দুর্বলতার চিকিৎসার জন্য সঠিক চিকিৎসক হলেন একজন বিশেষজ্ঞ ইউরোলজিস্ট ও অ্যান্ড্রোলজিস্ট।
● অ্যান্ড্রোলজিস্টের কাছে গেলে তিনি রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করবেন। কিছু ইনভেস্টিগেশন বা ল্যাব পরীক্ষা ও ডপলার আলট্রাসনোগ্রাম করা লাগতে পারে। ডপলার করা হলে রক্ত চলাচলজনিত বা ভাসকুলোজেনিক ইমপোটেন্স নিশ্চিত হওয়া যায়। পরীক্ষার সময় পুরুষাঙ্গে পেরোনিজ ডিজিজ বা অন্য কোনো রোগ আছে কি না, দেখা হয়।
● ইডি ও পিই—দুটিরই ভালো চিকিৎসা আছে। সঠিক পরামর্শ, ওষুধ ও ইনজেকশন বা পিনাইল প্রসথেসিস/ ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।
● ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কোনো হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হতে পারে। দরকার হলে একজন মনোরোগবিদের সাহায্যও লাগতে পারে।
বিয়ের আগে অনেকেই বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন। উন্নত অনেক দেশে এখন প্রাক্-বিবাহ কাউন্সেলিং চালু হয়েছে। বিবাহবিচ্ছেদ ও দাম্পত্য অশান্তি কমাতে এ–জাতীয় সমস্যায় অভিজ্ঞ অ্যান্ড্রোলজিস্টের পরামর্শ নেবেন।
অধ্যাপক ডা. আজফার উদ্দীন শেখ, বিভাগীয় প্রধান, ইউরোলজি ও অ্যান্ড্রোলজি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ