কিডনি শরীরে ছাঁকনির কাজ করে। রক্তের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে বের করে দেয়। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে ধীরে ধীরে কিডনির স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়। বর্জ্য বের হতে পারে না, রক্তের সঙ্গে থেকে যায়। এভাবে একসময় কিডনির কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
আমাদের দেহে দুটো কিডনি আছে। এ দুটোতে ২৪ লাখের মতো ছাঁকনি আছে। এগুলো সূক্ষ্ম রক্তনালি দিয়ে তৈরি। ছাঁকনিগুলোর মাধ্যমে ফিল্টার হওয়া বিশুদ্ধ রক্ত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে যায়। আর দূষিত রক্ত, বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল প্রস্রাবের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায়।
কিন্তু রক্তে অতিরিক্ত শর্করা থাকলে তা এই রক্তনালিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে ছাঁকনি দুর্বল হয়ে যায়। তখন প্রস্রাবের সঙ্গে বর্জ্য পদার্থ নয়, বরং আমিষের ক্ষুদ্র কণা বেরিয়ে আসতে থাকে। এগুলোকে বলে মাইক্রোএলবুমিন। দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগলে অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। কিডনি বিকল হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
সাধারণত ১০–১২ বছর ডায়াবেটিসে ভোগার পর সমস্যাগুলো অনুভূত হতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে খুব একটা উপসর্গ দেখা যায় না। তবে প্রস্রাবের সঙ্গে আমিষ (মাইক্রোএলবুমিন) গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। একেবারে প্রাথমিক লক্ষণ এটিই। অনেক সময় রোগীর শুরু থেকেই কিডনির জটিলতা থাকতে পারে। কারণ, ডায়াবেটিস দীর্ঘদিন অনেকের দেহে সুপ্ত অবস্থায় থাকে, ধরা পড়ে দেরিতে।
একজন ডায়াবেটিসের রোগীর বছরে দু–একবার নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে, লক্ষণ থাকুক বা না থাকুক। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রস্রাবের মাইক্রোএলবুমিন, এলবুমিন ক্রিয়েটিনিন রেশিও এবং রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা।
চোখ-মুখ, পায়ের নিচের অংশ ও শরীর ফুলে যায়। বিশেষত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বেশি ফোলা মনে হয়। ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
শরীরে পানি জমে। রক্তশূন্যতা বা রক্তস্বল্পতা দেখা হয়। ত্বকের স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়।
রক্তচাপ বেড়ে যায়। অরুচি ও ক্ষুধামান্দ্য তৈরি হয়। বমি, বমিভাব হয়।
হাত-পা কামড়ায়। নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি ভালো রাখার জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা যেন কোনোভাবেই অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে চলে না যায়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। কিডনি ভালো–মন্দ কী অবস্থায় আছে, তা জানতে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ পরীক্ষা করা জরুরি। এসবের পাশাপাশি নিম্নোক্ত নির্দেশনা মেনে চলুন:
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা বানিয়ে নিন। খাবারে যেন লবণ ও প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ধূমপান বর্জন করুন। যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
ডা. এ এস এম জুলফিকার, কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা