বছরের পর বছর সমস্যাটি নিয়ে ভোগেন অনেক নারী। এ চিকিৎসক থেকে ওই চিকিৎসকের কাছে ছোটেন। কিন্তু সমস্যার তেমন কোনো সুরাহা হয় না। নারীদের এ সমস্যার নাম এন্ডোমেট্রিওসিস।
সমস্যাটার সাধারণত শুরু হয় কৈশোরেই। মাসিক শুরু হওয়ার সময়ে।
প্রথম দিকে কিছুদিন মাসিক বন্ধ থাকে। এরপর প্রতিবার মাসিকের সময় শুরু হয় অসহ্য ব্যথা। কখনো ফার্মেসি থেকে ব্যথার ওষুধ কিনে খাওয়ানো হয়। কখনো বয়স্ক নারীরা বলেন, এ কিছু না, সবারই হয়। বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বয়স যত বাড়ে, সমস্যা কমে না; বরং ব্যথার তীব্রতা বাড়তেই থাকে।
পরে আর ওষুধেও কাজ হয় না। বিশেষ দিনগুলোতে স্কুল কামাই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
একসময় চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য হন। তারপর নানা পরীক্ষা–নীরিক্ষা। দেখা গেল তলপেটের আলট্রাসনোগ্রাম বলছে, ডিম্বাশয় বা ওভারিতে চকলেট সিস্ট আছে। নানা ধরনের হরমোন ওষুধ প্রয়োগে ব্যথা–বেদনা কিছুদিন ভালো থাকে, বন্ধ করলেই আবার বেড়ে যায়।
কখনো ল্যাপারোস্কপি করে সিস্ট ফেলা হয়। কিন্তু আবার দেখা দিতে পারে।
বিয়ের পর শুরু হয় নতুন সমস্যা। স্বামী সহবাসে ব্যথা বিপর্যস্ত করতে পারে নারীকে।
এন্ডোমেট্রিওসিস বন্ধ্যাত্বেরও একটি বড় কারণ, তাই সন্তান ধারণের জন্যও করতে হয় নানা চিকিৎসা।
একটা পর্যায়ে গিয়ে আক্রান্ত নারীটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর সামাজিক ও পারিবারিক জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।
এভাবে নারীর শারীরিক ও মানসিক—দুই ধরনের বিপর্যস্ততার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
যখন জরায়ুর টিস্যু জরায়ুর বাইরে অবস্থান করে, তখন তাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলা হয়। ফলে যখন মাসিক হয়, তখন জরায়ু ছাড়াও ওই অস্বাভাবিক অবস্থানের টিস্যুগুলো থেকে রক্তক্ষরণ হয় বলে তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়। ডিম্বাশয়ে এমন পরিবর্তনের কারণে সিস্ট তৈরি হয়। প্রজননতন্ত্রের নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এভাবেই পরিস্থিতি একসময় জটিল হয়ে পড়ে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগ শনাক্ত হতে হতে ৮ থেকে ১০ বছর কেটে যায়। তাই রোগনির্ণয়ে ও চিকিৎসায় দেরি বা অবহেলা নয়। শুরুতেই চিকিৎসা করালে জটিলতা ঠেকানো সম্ভব।
শুরু হতে যাচ্ছে এন্ডোমেট্রিওসিস সচেতনতা মাস। আসুন, নারীদের বেদনাদায়ক সমস্যাটি নিয়ে সচেতন হই।
সংকোচ বা দ্বিধা ঝেড়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে ভুলবেন না।
অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ