ভালো থাকুন

কীভাবে খাবারে আয়োডিন রক্ষা করবেন 

আমরা প্রায় সবাই থাইরয়েড হরমোনের গুরুত্ব এবং আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে কমবেশি জানি। একজন মানুষের মাতৃগর্ভে ভ্রূণ অবস্থা থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে থাইরয়েড হরমোন অন্যতম প্রধান প্রভাবশালী উপাদান। আর এ হরমোন তৈরির জন্য দরকার হয় আয়োডিন নামের খনিজ। খাদ্য গ্রহণে বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি সহজেই আয়োডিনের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম আয়োডিন ঘাটতি অঞ্চলের একটি। অতএব বাংলাদেশিদের খাদ্য উপাদান থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ আয়োডিন প্রাপ্তি নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

১৯৯৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ইউনিসেফের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ‘ইউনিভার্সাল সল্ট আয়োডিনেশন প্রোগ্রাম’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এর মূল লক্ষ্য ছিল খাবার লবণে প্রয়োজনীয় আয়োডিনের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এ কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে লবণ কারখানাগুলোতে প্রয়োজনীয় আয়োডিন সরবরাহ, মিশ্রণ নিশ্চিত করা ও বাজারে আয়োডিনমিশ্রিত লবণকে প্যাকেটজাত করে বিক্রিতে উৎসাহিত করা হতো। এতে যথেষ্ট কাজ হয়েছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরের অবস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আয়োডিনের প্রধান উৎস হলো লবণ। কিন্তু লবণে মিশ্রিত আয়োডিন একটি উদ্বায়ী পদার্থ। এটি খোলা বাতাসে উবে যায়। তাই বাজারের খোলা লবণে আয়োডিন পাওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। ইউনিভার্সাল সল্ট আয়োডিনেশন প্রোগ্রামের কারণে প্যাকেটজাত লবণের ব্যাপারে ধারণা তৈরি হয়েছে বটে, তবে প্যাকেটজাত লবণে আয়োডিনের উপস্থিতি সম্পর্কে সরকার বা তদারককারী সংস্থার যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

খাদ্য গ্রহণের সময় লবণ মিশ্রণের পদ্ধতিও আয়োডিন প্রাপ্তির একটি নিয়ামক ঘটনা হতে পারে। আমরা সাধারণত লবণ খোলা রাখতে অভ্যস্ত। এতে ওই লবণের আয়োডিন বাতাসে হারিয়ে যায়। লবণের আয়োডিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হলে প্যাকেট খোলার পর লবণ ভালো ঢাকনাওয়ালা কৌটা বা বয়ামে সংরক্ষণ করতে হবে। সেটি চুলার খুব কাছে রাখা ঠিক হবে না।

ভৌগোলিক বা আচরণগত কারণে বাংলাদেশের মানুষ আয়োডিনসমৃদ্ধ সামুদ্রিক খাদ্য গ্রহণে খুব একটা অভ্যস্ত নয়। জাপানসহ সব দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষ সামুদ্রিক মাছসহ অন্যান্য উৎস থেকে প্রয়োজনীয় আয়োডিন পেয়ে থাকে। আমাদের বঙ্গোপসাগর থেকে পাওয়া মাছ খুব ভালো আয়োডিনের উৎস হতে পারে। এ ব্যাপারে যথেষ্ট জনসচেনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তবে বর্তমানে ঢাকাসহ কিছু বড় শহরে সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সেসব মাছ খাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে।

আগামীকাল পড়ুন: পিসিওএস রোগীর খাদ্যাভ্যাস কেমন হওয়া উচিত