গলার সামনের দিকে থাকে থাইরয়েড গ্রন্থি। স্বাভাবিক অবস্থায় বাইরে থেকে এর অবস্থান বোঝা যায় না। গলার সামনে হাত দিলে কোনো গোটাও অনুভব করা যায় না। কোনো কারণে যদি থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যায়, তখনই কেবল গলার সামনে ফোলা কিংবা গোটাজাতীয় কোনো কিছুর উপস্থিতি অনুভব করা যায়। এ রকম অস্বাভাবিক কিছুর উপস্থিতি মানেই কিন্তু টিউমার বা ক্যানসারজাতীয় কিছু নয়। ফোলা বা গোটাজাতীয় কিছু হলেই যে অস্ত্রোপচার করতে হবে, তা-ও নয়।
জানতে হবে কারণ
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই থাইরয়েড গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া কিংবা এখানে কোনো গোটা থাকার কারণ কিন্তু টিউমার বা ক্যানসার নয়, অন্য কোনো কিছু। তবে থাইরয়েডে এমন কোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। কারণ যেটিই হয়ে থাকুক না কেন, চিকিৎসা জরুরি। থাইরয়েড দেহের সব বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ সার্বিক সুস্থতার জন্যই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমে এই গোটা বা ফোলার কারণ নির্ণয় করা হয়। সেই অনুযায়ী শুরু হয় চিকিৎসা। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক গোটাটিকে পরীক্ষা করে দেখার সময়ই একটা ধারণা পেয়ে যান, এটি ক্যানসারজাতীয় কিছু কি না। তবে ক্যানসার সন্দেহ হলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এফএনএসি করাতে হবে। এফএনএসি নির্দিষ্ট সুইয়ের সাহায্যে কোষ নিয়ে পরীক্ষা করার একটি পদ্ধতি। আর থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা নির্ণয় করতে আলাদা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়।
টিউমারের ধরন
থাইরয়েডের টিউমার সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি নিরীহ ধরনের টিউমার, অন্যটি ক্যানসার। ক্যানসারের আবার কয়েকটি ধরন থাকে। থাইরয়েড ক্যানসারের সঙ্গে তেজস্ক্রিয়তার সম্পর্ক রয়েছে। শৈশবে তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে এলে থাইরয়েড ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
থাইরয়েড ক্যানসারের চিকিৎসা
থাইরয়েড ক্যানসার আমাদের দেশের পরিচিত একটি সমস্যা। থাইরয়েডে ক্যানসার ধরা পড়লেই ভেঙে পড়বেন না। মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত রাখুন। দেশেই এর চিকিৎসা সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা গেলে বেশির ভাগ ক্যানসারই সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তাই চিকিৎসা নিতে দেরি করবেন না। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে থাইরয়েড গ্রন্থি সম্পূর্ণ ফেলে দেওয়া হলে পরে থাইরয়েড হরমোনের ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হয় রোজ। কিন্তু ক্যানসারের চিকিৎসা করানো না হলে তা মারাত্মক জটিল আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি হয়ে উঠতে পারে জীবননাশেরও কারণ। থাইরয়েড গ্রন্থির পুরোটাই ফেলে দিতে হবে কি না, সে সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে।
অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, এফআরসিএস, বিভাগীয় প্রধান, নাক-কান-গলা বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা