আমাদের দেশে ক্যানসারের প্রবণতা নিয়ে জাতীয় কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সংখ্যার বিচারে প্রতিবছরই ক্যানসার রোগী বাড়ছে। শঙ্কার বিষয় হলো, গত ২০ বছরে উন্নত দেশগুলোতে যখন স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে ক্যানসারের হার কমানো সম্ভব হয়েছে, সেখানে আফ্রিকা বা এশিয়া মহাদেশের স্বল্পোন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ক্যানসারের হার ক্রমেই বেড়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি যেসব ক্যানসার হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যনালি, মুখগহ্বর, স্তন, ফুসফুস ও জরায়ুমুখের ক্যানসার।
আসুন, আমরা এই পাঁচ ক্যানসারের লক্ষণ বোঝার চেষ্টা করি—
খাদ্যনালির ক্যানসার: শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। শুরুতে অরুচি, ওজন হ্রাস, পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে যখন রোগটা বাড়তে থাকে, তখন শুরু হয় খাবার গিলতে অসুবিধা। প্রথমে শক্ত খাবার এবং পরে তরল খাবার ও পানি গিলতেও অসুবিধা হয়। তারও পরে বমির সঙ্গে তাজা বা কালো রক্ত আসতে পারে।
মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসার: এ ক্যানসারের শুরুতে একটি ঘা কিংবা চাকা দেখা দিতে পারে। ঘা খুব ছোট করে শুরু হলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। অনেকেই মনে করেন, দাঁতে লেগে কেটে গেছে। সাধারণত যাঁরা পান, তামাক, জর্দা, খইনি, গুল ইত্যাদি খান তাঁদেরই মুখের ক্যানসার বেশি হয়। পরে রোগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মুখ থেকে লালা ঝরা, মুখের দুর্গন্ধ—এমনকি মুখ থেকে রক্তপাত হতে পারে।
স্তন ক্যানসার: এটি এখন বাংলাদেশের নারীদের প্রধানতম ক্যানসার। এখন ৪০ বছর বা তারও কম বয়সী নারীদের এই ক্যানসার হচ্ছে। এর প্রধান লক্ষণ স্তনে বা বগলে চাকা বা গোটা। এ ছাড়া স্তনের বোঁটা দিয়ে রস বা রক্ত পড়া, স্তনের চামড়া কুচকে যাওয়া, স্তনে ঘা হওয়া—এগুলো নিয়েও এই রোগ প্রকাশ হতে পারে। তবে সব চাকা বা গোটাই ক্যানসার নয়। স্তনে যত রকমের গোটা হয়, তার ১০ শতাংশ ক্যানসার-জাতীয়।
ফুসফুসের ক্যানসার: তিন সপ্তাহের বেশি কাশি, যা সাধারণ চিকিৎসায় ভালো হচ্ছে না, তাকে খুব গুরুত্বসহকারে নিতে হবে। কাশি ছাড়াও শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া, বুকে পানি জমা ইত্যাদি নিয়ে ফুসফুসের ক্যানসার দেখা দিতে পারে। ধূমপান এই ক্যানসারের সবচেয়ে বড় কারণ বলে ধরা হয়।
জরায়ুমুখের ক্যানসার: এটি নারীদের অন্যতম প্রধান ক্যানসার। প্রধান লক্ষণ হচ্ছে অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা দুই মাসিকের মাঝামাঝি সময়ে রজঃস্রাব কিংবা মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া নারীদের ক্ষেত্রে আবার রক্তপাত শুরু হওয়া। তা ছাড়া মাসিকের রক্তপাতের পরিমাণ বেড়ে যায় কিংবা মাসিকের সময় দীর্ঘ হতে থাকে, সেটিও এ ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। সঙ্গমের সময় ব্যথা, কিংবা শারীরিক সম্পর্কের পর রক্ত যাওয়া, তলপেটে ব্যথা, কিংবা যোনিপথে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব এই ক্যানসারের লক্ষণ।
ডা. হাসান শাহরিয়ার কল্লোল, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ সার্জন