স্যাঁতসেঁতে আর গরম আবহাওয়ার কারণে অনেকেরই এখন জ্বর হচ্ছে। সাধারণ ভাইরাসজনিত ভেবে এই জ্বরকে অবহেলা করা একেবারেই ঠিক না। ডেঙ্গু, করোনা, মৌসুমি জ্বরগুলোর উপসর্গ প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। তাই জ্বর হলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া ভালো।
ডেঙ্গু ভাইরাস রক্তে পৌঁছানোর পাঁচ থেকে সাত দিন পরে জ্বর হয়। ডেঙ্গু জ্বর হলেই যে সব সময় উচ্চমাত্রার জ্বর হবে, তা কিন্তু নয়। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টা পর থেকে জ্বর শুরু হয়। তবে অনেকের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট না–ও থাকতে পারে। করোনা রোগীদের সাধারণত শ্বাসনালিতে সমস্যা থাকে। করোনাভাইরাস সরাসরি শ্বাসনালিকে আক্রান্ত করে, তাই সাধারণত করোনা রোগীদের কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, টনসিল ফুলে যাওয়া, টনসিলে ইনফেকশন থাকে। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীদের শ্বাসনালিতে সমস্যা থাকতে পারে, আবার না–ও হতে পারে।
অনেক ডেঙ্গু জ্বর দুই থেকে তিন দিনে ভালো হয়ে যায়। অনেকেই মনে করেন জ্বর ভালো হয়ে গেছে, তাই ডেঙ্গু পরীক্ষা করানোর দরকার নেই। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যাওয়ার তিন থেকে চার দিন পরে রক্তে প্ল্যাটিলেটের মাত্রা কমতে শুরু করে। প্ল্যাটিলেট রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে সাহায্য করে। ডেঙ্গু জ্বরে প্ল্যাটিলেটের মাত্রা খুব বেশি কমে গেলে রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস এবং সাধারণ ভাইরাল ফিভারে রক্তপাত হয় না। হয়তো ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে গেছে, সেই রোগী বিশ্রাম নেওয়ার পরিবর্তে অফিসের ডিউটি করছেন বা বাসাতে বহুবিধ গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তখন হঠাৎ প্ল্যাটিলেটের মাত্রা কমতে পারে। নাক, মুখ, মল, মূত্র দিয়ে অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ হতে পারে। রোগী ভয়াবহ পরিণতিতে পৌঁছাতে পারে। এ ধরনের অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য অবশ্যই সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করে, রক্তের প্ল্যাটিলেটের মাত্রা দেখাতে হবে। অনেক সময় ডেঙ্গু জ্বরে বাইরে থেকে কোনো সমস্যা না থাকলেও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। অতিমাত্রায় রক্তক্ষরণ থেকে রোগী শকে পৌঁছাতে পারে। মারাত্মক পরিণতিতে রোগী ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে মারা যায়।
যারা আগে থেকে সাইনোসাইটিস, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট, হৃদ্রোগ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত বহুবিধ অসুখে আক্রান্ত, তাঁদের করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সচেতন থাকতে হবে। এ ধরনের রোগীদের অসুখ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বহুবিধ জটিলতা হতে পারে।
তাই জ্বর হওয়ার পর অপেক্ষা না করে দ্রুত কোভিড, ডেঙ্গু, এনএস ওয়ান অ্যান্টিজেন এবং সিবিসি পরীক্ষা করতে হবে এবং অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সব ডেঙ্গু বা করোনাভাইরাসের রোগীকে হসপিটালে ভর্তি প্রয়োজন হয় না। বাসায় থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে।