ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা খাবার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। ডায়াবেটিস কখনো সারে না। প্রথমেই এই সত্য মেনে নিতে হবে। ডায়াবেটিস নিরাময়ের আশায় অনেকে সজনেপাতাসহ নানা হারবাল বা কবিরাজি ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। বরং এসব খেয়ে কিডনি, যকৃত ইত্যাদির ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সুতরাং চটকদার বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে পড়ে নিজের স্বাস্থ্য আর কষ্টার্জিত অর্থ নষ্ট করবেন না। আসুন এসব ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কিটোজেনিক ডায়েটে কি ডায়াবেটিস সারে
অনেকেই এই ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাস করেন। এটা ঠিক, খাদ্যে শর্করা কমিয়ে ফেললে কিটো ডায়েটে রক্তের সুগার বেশ ভালো নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কিটো ডায়েট করলে শরীরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি তৈরি হয়। কিটো ডায়েটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিভার ও কিডনি। তা ছাড়া এতে ফ্যাটজাতীয় খাবার বেশি থাকে বলে রক্তে চর্বি বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিটো ডায়েট ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উত্তম, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
চিনি–মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়
চিনি বা মিষ্টি বেশি খেলে ডায়াবেটিস হয় না। তবে ডায়াবেটিস হয়ে গেলে চিনিযুক্ত ও মিষ্টিজাতীয় খাবার বন্ধ করতে হবে। তবে যেকোনো মিষ্টি খাবারই অতি ক্যালরিযুক্ত ও স্থূলতার অন্যতম কারণ। আর স্থূলতা ডায়াবেটিসের কারণ। তাই ডায়াবেটিস না থাকলেও মিষ্টিজাতীয় খাবার কম খাওয়া ভালো। সাদা চিনি, চকলেট, কোলাজাতীয় খাবার সবার জন্য ক্ষতিকর। একজন সুস্থ ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২৫-৩০ গ্রাম চিনি দিয়ে তৈরি খাবার খেতে পারেন।
ডাল ও বীজজাতীয় খাবার কি খাওয়া যাবে
অনেকে বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের কিডনি ভালো রাখতে ডাল ও বীজজাতীয় খাবার নিষেধ। এটা ভুল ধারণা। কারণ, কিডনি খারাপ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনি নষ্টের ঝুঁকি কম। তাই ডাল ও বীজজাতীয় খাবার পরিমিত খাওয়া যায়। এগুলো আমিষের উৎস।
মাঝেমধ্যে মিষ্টি খেতে হয়
বহুল প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝেমধ্যে মিষ্টি খেতে হয়। নইলে শর্করা কমে নিল হয়ে যায় বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়। এটা ভুল। সঠিক সময়ে সঠিকভাবে সুষম খাবার খেলে কখনো হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবে না। তবে রক্তের সুগার স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে মিষ্টিজাতীয় খাবার খেয়ে সেটা ঠিক করতে হবে। রুটিনমাফিক খাবার খেলে ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেলে রক্তের সুগার কমার সম্ভাবনা খুবই কম।
ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ
মায়ের ডায়াবেটিস থাকলেও বাচ্চাকে নিশ্চিন্তে বুকের দুধ পান করাবেন। এতে বাচ্চার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে মায়ের ওষুধ নির্বাচনের সময় সতর্ক থাকতে হবে। তাঁদের জন্য ইনসুলিনই সবচেয়ে নিরাপদ।
মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তাচট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল