শিশুর জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত পুরোপুরি এবং দুই বছর পর্যন্ত পরিপূরকভাবে পুষ্টির জন্য মায়ের দুধের ওপর নির্ভরশীল। এ সময় মায়ের দুধ থেকে সব পুষ্টি উপাদান না পেলে জীবনের শুরুতেই সে অপুষ্টিতে ভুগবে।
ক্যালরি: এ সময় দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরি ছাড়াও অতিরিক্ত ২০০ থেকে ৪০০ ক্যালরি লাগে। মাকে প্রায় হাফ কেজি বা ৫০০ গ্রাম দুধ তৈরি করতে হয়, যার জন্য প্রায় ৬২৫ কিলোক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়।
প্রোটিন: দুধের প্রোটিন তৈরির জন্য দুধ, ডিম, মাছ, মাংস প্রভৃতি খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। মসুর ডাল অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
পানি বা তরল: প্রচুর পানি বা তরল খাওয়া উচিত, নইলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এ জন্য প্রচুর পানির পাশাপাশি গাজর, পালংশাক দিয়ে বিভিন্ন শাকসবজির স্যুপ, চিকেন স্যুপ খেতে পারেন।
ক্যালসিয়াম ও আয়রন: প্রসবের সময় মা প্রচুর রক্ত হারান। এ জন্য তাদের আয়রন স্টোর বাড়াতে হয়। এ জন্য আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। এ ছাড়া শিশুর সুস্থ হাড় ও দাঁতের জন্য ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। সুতরাং মাকে দৈনিক ১ দশমিক ৫ গ্রাম ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস খেতে হবে। আয়রনের উৎস হিসেবে মাছ, মাংস, ডিম, সামুদ্রিক খাবার নিয়মিত খেতে হবে। নিরামিষ হিসেবে সবুজ, কালো ও শুকনা মটরশুঁটি, গুড়, লালশাক, কলমিশাক ইত্যাদি খেতে পারেন। ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে ছোট মাছ, দুধ, দই, তিল, সরিষা শাক, সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন।
গোটা শস্য: এ সময় গোটা শস্য ও পুরো শস্যের খাবার খাওয়া উচিত। লাল চালের ভাত, রুটি, ওটস, বার্লি, কুইনোয়া ইত্যাদি ভালো।
ভিটামিন ‘ডি’: ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের শোষণ ও বিপাকে সাহায্য করতে ভিটামিন ‘ডি’ দরকার। এ সময় ঘাটতি পূরণ না হলে মায়ের অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে।
ভিটামিন ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’: পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ ‘বি’ ও ‘সি’ পেতে রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। ভিটামিন ‘সি’র জন্য কিছু টক ফল নিয়মিত খেতে হবে। এ ছাড়া মিষ্টিকুমড়া, গাজর, লাউ, ঢ্যাঁড়স, মেথি, বিটরুট, সবুজ শাকসবজি, আপেল, ডালিম, পেঁপে, নাশপাতি ফল খাওয়া ভালো। প্রতিদিন গাঢ় সবুজ ও হলুদ সবজিসহ তিনটি সবজি খান।
গ্যালাকটাগোগাস জাতীয় খাবার: স্তন্যদানকারী মায়ের ডায়েটে এবং দুধ উৎপাদন বাড়াতে গ্যালাকটাগোগস জাতীয় খাবার যেমন—দুধ, পালংশাক, মেথি এবং মৌরি বীজ, রসুন, কাজুবাদাম, কমলা, তিল, কালোজিরা খেতে হবে।
ভেষজ চা: ভেষজ চায়ে কোনো ক্যাফেইন থাকে না। পুদিনাপাতা ও লবঙ্গ দিয়ে চা পান করলে মায়ের বুকের দুধের নিঃসরণ বাড়ে। এ ছাড়া আদা চা প্রসবের পরে মহিলাদের ব্যথা উপশমকারী হিসেবে কাজ করে।
লিনা আকতার, পুষ্টিবিদ, রায়হান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, দিনাজপুর