মধ্যকর্ণের হাড়ের পরিবর্তন

মানুষের মধ্যকর্ণের ভেতর রয়েছে খুব ছোট তিনটি হাড়—ম্যালিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস। স্টেপিসের রয়েছে একটি ফুট প্লেট, অর্থাৎ পায়ের কাছের বাটির মতো একটা অংশ। কখনো শুধু ফুট প্লেট বা এ তিন হাড়ের সব কটিরই গঠনগত পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়। এ পরিবর্তনের ফলে হাড়গুলো স্বাভাবিক অবস্থার মতো শব্দ পরিবহন করতে পারে না। এরপর ধীরে ধীরে বধিরতা, টিনিটাস বা কানে শোঁ শোঁ শব্দ, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব বা বমি ইত্যাদি হয়। এ অবস্থাকে বলা হয় অটোস্কলেরোসিস।

চিকিৎসা

অটোস্কলেরোসিস রোগ থেকে পুরোপুরিভাবে আরোগ্য লাভ করা যায় না। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। অল্প যে কয়েকটি ওষুধ আছে, সেগুলো ব্যবহার করে এ রোগ যাতে আর না বাড়ে বা দুই কানেই না হয়, সেই চেষ্টা করা যায়। এতে সমস্যা হলো, নির্দিষ্ট সময় পরপর চিকিৎসকের কাছে আসতে হয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়; যা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ তো বটেই।

অস্ত্রোপচার

বর্তমানে দেশেই এ রোগে অস্ত্রোপচার (স্টেপেডেকটমি) হচ্ছে। রাজধানীতেই বেশ কয়েকটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সফলতার সঙ্গে অস্ত্রোপচার করছেন। অস্ত্রোপচারে আক্রান্ত হাড় ফেলে স্থানটিতে গ্রাফট বা প্রোস্থেটিক স্থাপন করা হয়। এতে দুটি উপকার হয়। প্রথমত, আক্রান্ত হাড় ফেলে দেওয়ায় রোগটিকে শরীর থেকে দূর করা যায় এবং দ্বিতীয়ত, শ্রবণশক্তি কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

তাই মধ্যকর্ণের যেকোনো সমস্যা হালকাভাবে নিতে নেই। শ্রবণশক্তি কমে আসার ক্ষেত্রে একটা বাজে দিক হলো, নিজে নিজে এটা বোঝার উপায় কম। আস্তে আস্তে এ পরিবর্তনটা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে গুরুতর আকার ধারণ করে। তাই যখনই স্বাভাবিক কথাবার্তা বিরক্ত লাগবে, আপনার সঙ্গে কথা বলতে এলে কাউকে বারবার একই জিনিস বলতে হবে, ইলেকট্রনিক ডিভাইস আপনাকে কোনো ওয়ার্নিং মেসেজ দেখাবে, টিনিটাস বা মাথা ঘোরানো বাড়বে, তখন বিন্দুমাত্র দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

  • অধ্যাপক ডা. এম আলমগীর চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ধানমন্ডি, ঢাকা