সাধারণভাবে যেসব খাবার হজম হতে বেশি সময় নেয়, সেসব খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। শীতে এ ধরনের খাবার খেলে উপকার মিললেও এমন গরমে কিন্তু বিপদ! আর এই প্রক্রিয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘থার্মোজেনেসিস’, যা খাদ্য বিপাককরণের ফলে আপনার শরীরের তাপ উৎপাদন করে। চর্বি, প্রোটিন ও জটিল কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবারগুলো মূলত হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং শরীর গরম করে তোলে। জেনে রাখুন বিস্তারিত—
শরীর ভেতরে থেকে গরম করে তোলে বিভিন্ন রকমের মসলা। আমাদের রান্নাবান্নায় মসলার ব্যবহার বেশি, ফলে আমরা মসলা খাই প্রতিদিন, প্রতিবেলা। শরীর গরম করে যেসব মসলা, তার মধ্যে আছে আদা, জিরা, গোলমরিচ ও দারুচিনি। তাই এই গরমে রান্নায় যতটা পারা যায়, মসলার ব্যবহার কমান।
ডিম অত্যন্ত উপকারী ও প্রয়োজনীয় খাবার। একজন সুস্থ–স্বাভাবিক মানুষ একটি করে ডিম খেতেই পারেন। তবে অতিরিক্ত খেলে শরীরে কারও কারও কিছু ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তার মধ্যে শরীর উষ্ণতা বৃদ্ধিও একটি। ডিমে থাকে প্রচুর প্রোটিন ও ভিটামিন। আর এসবই মূলত শরীর গরমে ভূমিকা রাখে। এ কারণে প্রতিদিন একটির বেশি ডিম প্রয়োজন ছাড়া বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া না খাওয়াই ভালো। আর গরমে ডিমের ভাজি বা পোচ না খেয়ে সেদ্ধ করে খাওয়াই ভালো।
গরমের সময় মাংসের তৈরি বার্গার, কাবাব, ফ্রাইসহ অন্যান্য তেলজাতীয় ফাস্টফুড ও খাবার পরিহার করলে ভালো থাকবেন।
চা ও কফি শরীরের তাপ বাড়ায়। তা ছাড়া গরমে চিনিসহ কফিজাতীয় পানীয় শরীরকে পানিশূন্য করে। মুখমণ্ডলকে করে তোলে রক্তিম। এ কারণে গ্রীষ্মের সময় যতটা সম্ভব অতিরিক্ত চা-কফি পানে বিরত থাকুন।
মধুও উপকারী। তবে এই গরমে অতিরিক্ত মধু থেকে সাবধান! মধু প্রকৃতিগতভাবে উষ্ণ খাবার। এ কারণে শীতে নিয়মিত মধু খেলে শরীর উষ্ণ থাকে। উল্টো দিকে এই গরমেও একটু বেশি মধু খেয়ে ফেললে শরীর আরও গরম হয়।
প্রচুর ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা ৬, কপার ও ম্যাঙ্গানিজের উৎস তিল। এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বাড়ায় ও হজমে সাহায্য করে। প্রদাহ, আর্থরাইটিস কমাতেও উপকারী। তবে এই তিলও প্রাকৃতিকভাবে উষ্ণ খাবার। ক্যালসিয়াম ও আয়রনে ভরপুর তিল খাবেন অবশ্যই, তবে এই গরমে অতিরিক্ত নয়।
বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়ায় সস। কিন্তু সুস্থতার জন্য গরমের সময় এসব সস এড়িয়ে চলাই উচিত। কারণ, এতে প্রচুর ক্যালোরি ও লবণ থাকে।
শুকনো ফল (ড্রাই ফ্রুটস) না খাওয়াই ভালো। এতে শরীর আরও ডিহাইড্রেটেড বা পানিশূন্য হয়ে যেতে পারে। ভাজাপোড়া, পোলাও, বিরিয়ানি, কোমল পানীয়ও বাদ দিন।
পেট পুরে মাছ, মুরগি, গরু বা খাসির মাংস, তন্দুরি—এসব খাওয়ার সময় গ্রীষ্মকাল নয়। এতে শরীরের তাপ বাড়ে, বাড়ে ঘাম। এ ধরনের খাবার গ্রহণে হজম-সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হতে পারে। এমনকি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।