সাধারণত বয়স দুই বছর হওয়ার পরও লালা পড়াটা অস্বাভাবিক হতে পারে
সাধারণত বয়স দুই বছর হওয়ার পরও লালা পড়াটা অস্বাভাবিক হতে পারে

শিশুদের অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ কি খারাপ? কারণ ও সমাধান কী?

লালা, থুতু বা স্যালাইভা মুখের ভেতর নিঃসৃত অতিজরুরি তরল, যা মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অন্যতম ভূমিকা রাখে। তবে কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এ লালা নিঃসরণের মাত্রা বেশি দেখা যায়। কথা বলার সময়, ঘুমের মধ্যে বা এমনিতেই তাদের লালা গড়িয়ে পড়ে। এটা কি খারাপ? সাধারণত বয়স দুই বছর হওয়ার পরও লালা পড়াটা অস্বাভাবিক হতে পারে, প্রয়োজন পড়তে পারে চিকিৎসকের পরামর্শের।

সম্ভাব্য কারণ

  • শিশুদের সাধারণত ছয় মাস বয়সের পর দাঁত ওঠা শুরু হয়। তখন তারা হাতের কাছে যা পায়, তা–ই কামড়াতে চায়। এ সময় তারা শূলশূল বা অস্বস্তি অনুভব করে, জ্বর আসতে পারে। হয়ে থাকে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণও।

  • শিশুরা সহজেই ঠান্ডা–সর্দিতে আক্রান্ত হয়। এ সময় নাক দিয়ে পানি পড়ে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, অ্যালার্জি হতে পারে। এসব অবস্থায় অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হতে পারে।

  • স্নায়ুর সমস্যা বিশেষ করে ফেসিয়াল নার্ভ, সেরিব্রাল পালসি, ট্রাইজেমিনাল নার্ভের সমস্যায় এমন হতে পারে।

  • মুখের মধ্যে কোনো ক্ষত, সাইনাস বা টনসিলে প্রদাহসহ কিছু সংক্রমণ থেকে অতিরিক্ত লালা পড়তে পারে।

  • লোভনীয় বা টকজাতীয় খাবারেও লালা বেশি পড়ে।

  • জিবের অস্বাভাবিকতা, ঠোঁট বন্ধ না হওয়া, ঠোঁট ও তালুকাটা, বদভ্যাস, কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, দাঁতের নতুন ফিলিং করানো, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, এলোমেলো ও ফাঁকা দাঁতের কারণেও লালা পড়ে বেশি।

কী হতে পারে

  • সামাজিকভাবে বিব্রত হওয়া, মানসিক চাপ অনুভব করা, সহপাঠী বা বন্ধুদের দ্বারা এড়িয়ে চলার শিকার হওয়া।

  • ঠোঁটের চারদিকে বিশেষ করে দুই কোনায় ভেজা থাকায় নানা প্রদাহ, সংক্রমণ হতে পারে।

  • মুখ ও কাপড়ে দুর্গন্ধ ও দাগ লেগে থাকা।

  • কথা বলা, হাসি, উচ্চারণ করে পড়ার সময় লালা বেরিয়ে আসা।

  • খাবার গ্রহণকালে লালা বেরিয়ে আসা, গিলতে সমস্যা হওয়া ও অপুষ্টি।

  • লালা অনেক সময় শ্বাসতন্ত্রে ঢুকে কাশি হয়, ইনফেকশন থেকে নিউমোনিয়াও হতে পারে।

  • গলার কাছে লালা জমে শ্বাস নিতে অসুবিধা হওয়া।

করণীয়

  • ডেন্টাল চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক কারণ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

  • অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হয় এমন খাবার থেকে বিরত থাকা।

  • যে পজিশনে থাকলে বেশি লালা নিঃসৃত হয়, শিশুকে সেভাবে না রেখে মাথা ও ঘাড় ঠিকভাবে রাখার অভ্যাস করানো।

  • মুখের পরিচর্যায় কোনো অবহেলা নয়। নরম টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজা ও ফ্লোরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করা।

  • চুষনি, আঙুল চোষা, অত্যধিক টিভি/ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

  • ডিহাইড্রেশন রোধে অল্প অল্প করে পানি পান, আদা চিবানো, পেঁপের জুস পান করানো।

এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামতে স্পিচ থেরাপি ও ক্ষেত্রবিশেষে মেডিকেশন দরকার হতে পারে।

ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা