ডাউন সিনড্রোম হলো একটি জন্মগত ত্রুটিজনিত রোগ। প্রতি ৭০০ থেকে ১০০০ নবজাতকের মধ্যে একজন এ সমস্যা নিয়ে জন্মায়।
জন্মের পরপরই শিশুর বিশেষ মুখাকৃতি ও অন্যান্য অঙ্গ পর্যবেক্ষণ করে রোগটি নির্ণয় করা যায়।
শিশুর চ্যাপ্টা মাথা, চোখের কোনা ওপরের দিকে ওঠানো, চাপা নাক, কান নিচে থাকা, হাতের তালুতে একটি মাত্র রেখা ও জিব বের হয়ে থাকা, মাংসপেশির শিথিলতা অন্যতম।
এ ছাড়া ক্রমে কানে কম শোনা, কথা বলতে দেরি হওয়া, কম উচ্চতা, অধিক ওজন, কম বুদ্ধি ইত্যাদি জটিলতা প্রকাশ পায়।
অনেক সময় ডাউন সিনড্রোমের সঙ্গে হৃদ্যন্ত্র, রক্তকণিকা ও চোখের সমস্যাও থাকতে পারে।
জন্মের আগে বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের শিশুর মধ্যে এই সমস্যা চিহ্নিত করা যেতে পারে। যেমন সন্তান মায়ের পেটে আসার ১০ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে আলট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে, মায়ের রক্ত নিয়ে বা মায়ের পেটের পানি নিয়ে পরীক্ষা (এমনিওসেটেসিস), ভ্রূণের টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা (সিভিএস) ইত্যাদি।
এই বিশেষ শিশু সারা জীবনে বিভিন্ন মাত্রার শারীরিক ও মানসিক বৈকল্যজনিত সমস্যার শিকার হতে পারে। দেখা দিতে পারে হরমোনজনিত জটিলতাও।
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশু খাটো হয়ে থাকে। এর মূল কারণ হাড়ের ঘনত্ব কম থাকা।
এসব শিশু অধিক হারে বিভিন্ন ধরনের থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। এর বেশির ভাগই বাহ্যিক লক্ষণ দেখে প্রাথমিক অবস্থায় রোগনির্ণয় সম্ভব হয় না।
এসব শিশুর অটো ইমিউন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। এর মধ্যে টাইপ–১ ডায়াবেটিস, সিলিয়াক ডিজিজ উল্লেখযোগ্য।
ডাউন সিনড্রোমে গোনাডোট্রপিন হরমোন কম বা বেশি দুই-ই থাকতে পারে। তবে পরিমিত সেক্স হরমোন থাকার কারণে সন্তানের মা–বাবা হওয়ার ক্ষমতা রাখে।
সময়মতো পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে হরমোনজনিত জটিলতাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে এই শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে।
মা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ করলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই সঠিক বয়সে সন্তান ধারণ করা উচিত।
ডা. রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল