ভোরের সূর্য দেখেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দিন কেমন যাবে, অনুমান করা যায়। তেমনই সকালের খাদ্যাভ্যাসও ঠিক করে দেয়, দিনটি আপনার কতটা স্বাস্থ্যকর হবে। সে কারণে ভোরে উঠেই আপনি কী খেয়ে দিন শুরু করছেন, বিশেষজ্ঞরা তার ওপর জোর দেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপনার ভোর যদি হয় খালি পেটে পানি খেয়ে, তাহলেই তা দুরন্ত শুরু। কিন্তু এর সঙ্গে যদি যোগ করেন কুসুম গরম লেবু–পানি, তবে তো উড়ন্ত সূচনা!
বলা হয়, খালি পেটে গরম পানি হজমশক্তি বাড়ায়, জোগায় তাৎক্ষণিক শক্তি। সঙ্গে নানা স্বাস্থ্যসুবিধা তো আছেই। এর সঙ্গে মাত্র এক চা–চামচ লেবুর রস যোগ করলে এই ‘যৌথ বাহিনী’ কী করতে পারে, তা জানার আগে চলুন আলাদাভাবে জেনে নেওয়া যাক কুসুম গরম পানি ও লেবুর রসের উপকারিতা।
খালি পেটে গরম পানি খেলে অনেক ধরনের উপকারই হয়। বিপাকপ্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে হজমশক্তি বাড়ায় এবং দিনভর খাদ্য ভাঙতে সহায়তা করে। কুসুম গরম পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। যকৃৎ ও কিডনির কার্যক্রম শক্তিশালী করে, যা প্রাকৃতিকভাবে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ প্রক্রিয়াকে (ডিটক্সিফিকেশন) গতিশীল করে।
কুসুম গরম পানি পেটের গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং অন্ত্রের নড়াচড়া সহজ করে। রক্ত সঞ্চালন ও পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে। এতে ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের পেশি শক্ত হয়ে থাকার যে জটিলতা তৈরি হয়, তা কাটিয়ে উঠতে সুবিধা হয়।
এত সব সুবিধা ছাড়াও বোনাস হিসেবে কুসুম গরম পানি সারা রাত অনাহারে থাকা শরীরে ‘জলযোগ’ করে সতেজ করে তোলে। এটি শক্তি বাড়ায় ও মানসিকভাবে প্রশান্তি দেয়। এভাবে সকালে কুসুম গরম পানি খাওয়ার মতো সহজ অভ্যাস আপনার সারা দিনটাকেই স্বাস্থ্যকর করে তুলবে।
বলা হয়, লেবুর রস খাওয়া সার্বিকভাবে সুস্থ থাকার অন্যতম সহজ ও কার্যকর তরিকা। এই রস ভিটামিন সি, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও দরকারি পুষ্টি উপাদানে ঠাসা। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, কোষের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যাল ঠেকায় এবং ত্বকে বলিরেখা প্রতিরোধকারী কোলাজেন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে।
লেবুর রস খেলে শরীরে পিত্তরস তৈরি হয়, যা হজমে সাহায্য করে। পেট ফাঁপা কমায় এবং এর ক্ষারীয় ক্ষমতা শরীরে পিএইচের মাত্রা ঠিক রাখে।
লেবুর রস ক্ষুধা কমিয়ে এবং বিপাকক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। এর বিষাক্ত পদার্থ অপসারণকারী প্রাকৃতিক উপাদান যকৃৎ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে ভূমিকা রাখে। এই পানির প্রাকৃতিক জলযোগ করার প্রবণতা যে কারও পুরো দিনকে অসাধারণ করে তোলে।
১. হজম স্বাস্থ্যের উন্নতি
বলা হয়, একদিকে কুসুম গরম পানি আমাদের হজমপ্রক্রিয়া উদ্দীপিত করে, অন্যদিকে লেবুর রস পিত্তরসের উৎপাদন বাড়ায়। ফলে কুসুম গরম লেবু–পানি শরীরকে খাদ্য ভাঙতে সাহায্য করে হজম সহজ করে।
২. ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, লেবুর রসে প্রচুর সাইট্রিক অ্যাসিড থাকে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে যকৃৎকে আরও কার্যকর করে তোলে। অন্যদিকে গরম পানিও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিয়ে ডিটক্সিফিকেশনে সাহায্য করে।
৩. শরীরে জলযোগ করে
সারা রাত অনাহারে থাকার পর সকালে আমাদের শরীর পানিশূন্যতায় ভোগে। এ সময় কুসুম গরম লেবু–পানি শরীরে পানিযোগ করে আমাদের সতেজ ও প্রাণবন্ত করে তোলে, যা সারা দিনের রসদ জোগায়।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে
এটা প্রমাণিত যে লেবুর রসে পেকটিন নামের একধরনের আঁশজাতীয় উপাদান থাকে, যা আমাদের ক্ষুধা কমায়। যখন এর সঙ্গে গরম পানি যুক্ত হয়, তখন তা শরীরকে আরও পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়। এভাবে কুসুম গরম লেবু–পানি ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে।
৫. ত্বককে করে উজ্জ্বল দীপ্তিময়
লেবু ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পূর্ণ। এসব শরীরের কোষ ধ্বংসকারী ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ত্বকের দাগ দূর করে এবং ত্বককে করে স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বল ও দীপ্তিময়। প্রচুর পানি খেলেও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়, ত্বকে আসে উজ্জ্বল আভা।
৬. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
লেবুর ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। শরীরকে ঠান্ডা-সর্দিসহ বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।
৭. দেহকে ক্ষারীয় করে
লেবুর স্বাদ অম্লীয় হলেও এর ক্ষারীয় ধর্ম আছে। এটি শরীরকে ক্ষারীয় করে বিপাকক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে। এই পানি পিএইচের মাত্রা ঠিক রেখে অম্লের সমস্যা দূর করে।
প্রথমে একটি পাত্রে কিছু পানি কুসুম গরম করুন। তা গ্লাসে ঢেলে এর মধ্যে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস যোগ করুন। ভালোভাবে নাড়ুন। ব্যস, এবার খেয়ে ফেলুন!
অনেকের ধারণা, কুসুম গরম লেবু–পানি দাঁতের ওপরের আবরণ এনামেলের ক্ষতি করতে পারে। আপনারও যদি এমন ভয় থাকে, তাহলে স্ট্র বা কাঠির সাহায্যে ধীরে ধীরে এই পানি খেতে পারেন। না হলে আপনার চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন, তবু খান! এই পানির স্বাদে ভিন্নতা আনতে সঙ্গে যোগ করতে পারেন মধুও।
সূত্র: ওয়েব এমডি