অস্টিওম্যালেসিয়া রোগটি মূলত ভিটামিন ডির অভাবজনিত রোগ। এতে হাড় দুর্বল বা নরম হয়ে পড়ে। ভিটামিন ডির অভাবে শিশুদের যে রোগ হয়, সেটিকে বলে রিকেট। আর এ রোগ যখন বড়দের দেখা যায়, তখন বলে অস্টিওম্যালেসিয়া।
● পর্যাপ্ত ভিটামিন ডির অভাবে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের সঠিক গঠন করতে পারে না। আর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস খনিজ দুটি হাড়ে কম থাকলে তা নরম হাড়ে পরিণত হয়।
● খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন ডি না পেলে এবং ত্বকে সূর্যালোক থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি তৈরি না হলে এই ভিটামিনের ঘাটতি দেখা দেয়। কোনো কারণে ভিটামিন ডি শরীরে ঠিকমতো শোষিত হতে না পারলে, যেমন পাকস্থলী বা অন্ত্রের অস্ত্রোপচারের পর, যকৃতের অসুখ, সিলিয়াক ডিজিজ ইত্যাদিতেও ভিটামিন ডির ঘাটতি হয়।
● ভিটামিন ডির বিপাকক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হলেও ওই রোগ হতে পারে, যেমন রেনাল ফেইলিউর, রেনাল অস্টিওডিস্ট্রোফি ও কিছু ওষুধ (যেমন অ্যান্টিকনভালসেন্ট, সিডেটিব বা ঘুমের ওষুধ ও রিফামপিসিন) সেবন করলে।
● এ ছাড়া রক্তে ফসফেটের পরিমাণ কমে গেলেও এ রোগ হয়।
● হাড়ের মধ্যে অস্বস্তি ভাব, পিঠ ও কোমরে ব্যথা, মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
● রোগী সাধারণত ওপরে উঠতে কষ্ট ও দুর্বলতা অনুভব করেন।
● হাঁটতে গিয়ে সমস্যা হয়। খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। মুখের মাংসপেশি নড়তে পারে।
● সামান্য আঘাত বা কোনো আঘাত ছাড়াই শরীরে হাড় ভেঙে যেতে পারে।
● হাড়ের এক্স-রে করলে ক্ষয়প্রাপ্ত ও ভাঙা মনে হয়। সাধারণত পাঁজরের হাড়, পায়ের ওপরের অংশের হাড় এবং শ্রোণিচক্রের হাড় বেশি আক্রান্ত হয়।
● অস্টিওম্যালেসিয়ার চিকিৎসায় ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ভিটামিন ডি–সমৃদ্ধ খাবার হলো দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য, চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম ও যকৃৎ।
● রোগীকে বেলা ১১টা থেকে ৩টা—এই সময়ের মধ্যে রোদে রাখা উচিত।
● প্রতিদিন ২৫ থেকে ১২৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি ওষুধ হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। যদি রোগীর অন্ত্রে কোনো অসুবিধা থাকে বা কোনো বিপাকীয় রোগ থাকে, তবে ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি গ্রহণ করা উচিত।
● সপ্তাহে একটি ভিটামিন ডি ইনজেকশন নেওয়ার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
●অস্টিওম্যালেসিয়া যদি কিডনি রোগের জন্য হয়, তবে আলফা-ক্যালসিডল বা সক্রিয় ভিটামিন ডি দিতে হবে।
ডা. জি এম জাহাঙ্গীর হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)