প্রতিদিন গোসল করা কি জরুরি

প্রতিদিন গোসল করাটা জরুরি কি না, আপনার পরিবেশ ও ত্বকের ওপর তা নির্ভর করে
মডেল: রাতুল, ছবি: কবির হোসেন

শীতে গোসল করার কথা মনে পড়লেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। কম্বলের ওম ছেড়েই যেখানে বের হতে ইচ্ছা করে না, সেখানে আবার গোসল। তবুও কিছু মানুষ এই শীতে প্রতিদিন গোসল করেন। অনেকে বিশ্বাস করেন, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য প্রতিদিন গোসল করা অপরিহার্য। আবার অনেকের বিশ্বাস, প্রতিদিন গোসল করলে শরীরে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে শুষ্ক হয়ে পড়ে ত্বক। অর্থাৎ প্রতিদিন গোসল করায় সমস্যাও আছে। তা ছাড়া প্রতিদিন গোসলের ব্যাপারটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। গোসল না করলে আশপাশের মানুষ আপনাকে নোংরা বলবে। এই ভয়ে অনেকে শীতকে তুচ্ছ করে গোসল করেন। কিন্তু আসলেই কি প্রতিদিন গোসল করা জরুরি? তার চেয়ে বড় কথা, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন গোসল করা কি বাধ্যতামূলক? বিশেষজ্ঞদের মত কী?

প্রতিদিন গোসল করাটা জরুরি কি না, তা আসলে আপনার পরিবেশ ও ত্বকের ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি অতিরিক্ত ঘামেন, ময়লা কিংবা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কাজ করেন, সে ক্ষেত্রে আপনার প্রতিদিন গোসল করাই উচিত। কিন্তু ওপরের কোনোটিই যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়, তাহলে প্রতিদিন আপনার গোসল না করলেও চলবে। কিন্তু ঠিক কত দিন পরপর গোসল করতে হবে, এমন কোনো ধরাবাঁধা নিয়মের কথা বিশেষজ্ঞরা বলেননি। ত্বকের ধরন অনুসারে দুই দিন বা তিন দিন পরপরও গোসল করতে পারেন। কিন্তু ত্বকের ব্যাপারটা কী?

শীতে গোসল করার কথা মনে পড়লেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে

সব মানুষের শরীর থেকে একধরনের প্রাকৃতিক তেল নিঃসৃত হয়। বিশেষ করে মুখের দিকে তাকালে তা বোঝা যায়। এই তেলের কারণে আমাদের মুখ মসৃণ ও উজ্জ্বল থাকে। তবে সবার ত্বকের তেল নিঃসরণের হার সমান নয়। কারও বেশি নিঃসৃত হয়, কারও কম। তেল নিঃসৃত না হলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। খসখসে লাগে মুখ। এ ছাড়া আমাদের ত্বকের বাইরে কিছু ভালো জীবাণু থাকে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। সব জীবাণুই ক্ষতিকর নয়। যাহোক, নিয়মিত গোসলের কারণে ত্বকের সেই ভালো জীবাণুও ধুয়ে, মুছে সাফ হয়ে যায়। কমে যায় ত্বকের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।

এ ছাড়া গোসল করার সময় আমরা সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহার করি। সাবানে থাকে সোডিয়াম লরেল সালফেট, সোডিয়াম লরিথ সালফেট, ফর্মালডিহাইড, হেক্সাক্লোরোফিনসহ আরও অনেক উপাদান। এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সোডিয়াম লরেল সালফেটের কারণে সংবেদনশীল ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ত্বক পরীক্ষা করে সাবান ব্যবহার করা উচিত।

এখন একটু জরিপ দেখা যাক। ২০২০ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মিলেনিয়াল পডকাস্টে একটি জরিপ চালানো হয়। তখন পৃথিবীতে চলছে করোনা মহামারি। এই পরিস্থিতিতে শ্রোতাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁরা প্রতিদিন গোসল করেন কি না? ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রোতা জানান, কোয়ারেন্টাইনের সময় তাঁরা নিয়মিত গোসল করেননি।

২০২০ সালে যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল পত্রিকা প্রকাশ করে, যুক্তরাজ্যের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন গোসল করেন না।

এখনো হয়তো আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, প্রতিদিন গোসল করবেন নাকি করবেন না? চলুন, লন্ডনের এক বিশেষজ্ঞের কথা শুনি। যুক্তরাজ্যের ক্যাডোগান ক্লিনিকের পরামর্শক ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডেরিক ফিলিপস। তিনি বলেন, ‘সামাজিক কারণে আমাদের দিনে একবার গোসল করা জরুরি। কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি নয়।’

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কিছু মানুষের প্রতিদিন গোসল না করলেও সমস্যা নেই। তাঁরা হলেন—

  • শিশু

  • যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল

  • যাঁরা পানি সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

  • যাঁরা ডেস্কে বসে কাজ করেন

শিশুদের প্রতিদিন গোসল না করলেও সমস্যা নেই

আবার কিছু মানুষের নিয়মিত গোসল করা জরুরি—

  • যে শিশু খুব বেশি অগোছালো থাকে

  • যাঁরা আর্দ্র স্থানে বাস করেন

  • যাঁরা ঘন ঘন ব্যায়াম করেন

  • যাঁরা প্রচুর শারীরিক কাজ করেন

ডেরিক ফিলিপসের মতে, শিশুদের ত্বক সূক্ষ্ম থাকে। তাই বড়দের সাবান কিংবা বেশি গরম পানিতে তাদের গোসল করানো উচিত নয়। শিশুদের প্রতিদিন গোসল করালে ত্বকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তবে ছোট বাচ্চাদের গোসলে ঝুঁকি নেই। তাদের শরীরে অল্প তেল মাখিয়ে প্রতিদিন কম করে গোসল করানো যায়।

সবশেষে প্রতিদিন গোসল করলে মানসিকভাবে শান্তি পাবেন। নিজেকে সতেজ লাগবে। কিন্তু তা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়। আবার সর্বোচ্চ তিন দিনের বেশি গোসল না করে থাকাও উচিত নয়। ব্যক্তিভেদে সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন গোসল করা স্বাভাবিক হতে পারে।

সূত্র: হেলথলাইন ডটকম, হেলথ ডট হার্ভার্ড ডট এডু