পথেঘাটে এমন মানুষ নিশ্চয় দেখেছেন, যাঁদের গায়ে প্রচুর পরিমাণে ছোট ছোট গুটি বা টিউমার থাকে। অনেকের বাইরে থেকে দেখা না গেলেও হাত দিলে ত্বকের নিচে গুটি গুটি অনুভব করা যায়। এদের বলে স্নায়ুর আবরণীর টিউমার বা নিউরোফাইব্রোমা। এই নিউরোফাইব্রোমাই যখন পুরো শরীরে হয় এবং এরই সঙ্গে অন্য অঙ্গেরও রোগ দেখা দেয়, তখন সেটাকে নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস বলে।
নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস কেন হয়
নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস (NF) স্নায়ুতন্ত্রের একটি জেনেটিক রোগ। এতে শরীরের যেকোনো অংশের স্নায়ুতে টিউমার গজায়। সেই সঙ্গে ত্বকের ও হাড়ের বিকৃতিও হতে পারে।
এই রোগ ৩ ধরনের
NF1 - নিউরোফাইব্রোমিন জিনের মিউটেশন (বা পরিবর্তন) এর কারণে
NF2 - মারলিন জিনের মিউটেশনের কারণে
শোয়ানোম্যাটোসিস-SMRCB1/INI1 জিনের মিউটেশনের কারণে
জিনগত কারণ ছাড়া এখন পর্যন্ত অন্য কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাবা-মা, দাদা–দাদি, নানা-নানির এই রোগ থেকে থাকলে এর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিসের লক্ষণ
প্রতিটি নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিসের জন্য আলাদা আলাদা রকমের লক্ষণ রয়েছে। তবে সাধারণ লক্ষণগুলো জানা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো হালকা এবং সহজে খেয়াল করা যায় না।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
নিউরোফাইব্রোমা সাধারণত দেখেই চেনা যায়, পরীক্ষা–নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। তবে ম্যালিগন্যান্সি হচ্ছে কি না জানার জন্য বায়োপসি করা যেতে পারে, তবে এ রোগের ক্ষেত্রে ম্যালিগন্যান্সি বা ক্যানসারে পরিবর্তনের আশঙ্কা নেই বললেই চলে। এই রোগের সঙ্গে মস্তিষ্ক বা চোখের সমস্যা শুরু হলে সেসব ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয়।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা
নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তবে যেহেতু এ রোগের সঙ্গে চোখ, হাড় ও মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের সম্পর্ক আছে, তাই নিউরোফাইব্রোম্যাটোসিস থাকলে শরীরে অন্য কোথাও কোনো রোগ আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে হবে এবং থাকলে তার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নিতে হবে। নিউরোফাইব্রোমায় সাধারণত অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয় না। যদি ব্যথা করে অথবা ত্বকে দেখতে খারাপ দেখায়, তাহলে নিউরোফাইব্রোমায় অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে।
ডা. হিমেল বিশ্বাস, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড