ঘুম শিশুর সুস্বাস্থ্যের একটি বড় নিয়ামক। শিশু-বয়সে আদর্শ ঘুমের যে সময় সারণি পাওয়া গেছে, তা নিম্নরূপ—
শিশুর অনিদ্রা
শিশুর অনিদ্রা বলতে নিয়মমাফিক ঘুমের অভাব ও ঘুমের পরিমাণ কম হওয়াকে বোঝায়। এতে শারীরবৃত্তীয় ঘুমচক্রে পরিবর্তন আসে। শিশুর স্বাস্থ্যকর ঘুম না হলে সে দিনের বেলায় বেশি ঘুমাবে। তাতে দিনের কাজের মান কমে যায়। সে ঝিমোতে থাকে, হাই তোলে, বেশির ভাগ সময় খিটখিটে মেজাজে থাকে। এর সঙ্গে ক্রোধ, ক্লান্তি, দিনভর অবশ ভাব, শিরঃপীড়া, মাংসপেশির ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। বুদ্ধিবৃত্তি ও স্মরণশক্তিতে ঘাটতি, ডানপিটে আচরণ এর অন্যতম প্রকাশ। সব মিলিয়ে বিদ্যালয় কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।
বয়ঃসন্ধিকালের ঘুম
কৈশোরে রাতে ৮ থেকে সাড়ে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমানো উচিত। প্রতিদিন এক ঘণ্টা কম ঘুমানো হলে সপ্তাহের শেষে তার পুরোটা যোগ হয়ে যায়। ঘুমহীন অবস্থা নানা সংকট তৈরি করে। যেমন মনোযোগ কমে যায়, স্বল্পকালীন স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, পারফরম্যান্সে জোয়ার-ভাটা ঘটে, তাৎক্ষণিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না, মেজাজ চড়া থাকে, স্কুলে সমস্যা, গাড়ি চালানোতে প্রায় দুর্ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।
স্বাস্থ্যকর ঘুম হওয়ার পদক্ষেপ
শিশু যেন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যায়। হঠাৎ কোনো কারণে ব্যত্যয় ঘটলে তা যেন এক দিন থেকে অন্য দিনে এক ঘণ্টার বেশি না হয়।
ঘুমানোর আগের এক ঘণ্টা সময় শিশু যেন নিরুপদ্রব থাকে। এই সময় টেলিভিশন, কম্পিউটার গেমস বা অন্য কোনো খেলায় মত্ত থাকা যাবে না।
পেটে খিদে নিয়ে না ঘুমানো। তবে ঘুমানোর এক-দুই ঘণ্টার মধ্যে ভরপেট খাবার গ্রহণ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। কপি, চা, চকলেট ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ঘুমাতে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে না খাওয়া।
শোবার ঘর যেন আলোহীন, শান্ত পরিবেশের থাকে। তাপমাত্রা যেন সহনীয় মাত্রার হয় (২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কম)। শোবার ঘরে যেন টেলিভিশন না রাখা হয়।
প্রতিদিন খেলাধুলা বা কায়িক শ্রম করা। ঘুমের বড়ি না খাওয়া, ধূমপান ও অ্যালকোহল মুক্ত জীবন যাপন করা।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল