তাপপ্রবাহের প্রতিক্রিয়ায় মাথাব্যথা, পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, হিটস্ট্রোকের পাশাপাশি শরীরে বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো মাসল পুল। ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, পা বা ঘাড়টা নাড়াতেই পারছেন না। জোর করে নাড়াতে গেলেই মনে হচ্ছে শিরা, উপশিরা, ধমনি, মাংশপেশি বা এ–জাতীয় কিছু একটা ছিঁড়ে যাবে। এ রকম অভিজ্ঞতা আমাদের কমবেশি অনেকেরই হয়েছে। মাসল পুল হলে মাংসপেশিতে অস্বস্তি হয়, ব্যথা করে। এ ছাড়া গরমে হিটক্র্যাম্পও হতে পারে। মাসল পুল গরমে কেন বেশি হয় ও করণীয় কী—জেনে নিন।
মাসল পুল কী?
মাসল পুল হচ্ছে মাংসপেশিতে টান পড়া। যখন মাংসপেশির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে বা মাংসপেশি ক্লান্তিবোধ করে, তখন সাধারণত এ রকম হতে পারে। মাসল পুল যেকোনো মাংসপেশিতেই হতে পারে। তবে পায়ের হ্যামস্ট্রিং ও কাফ মাসলে বেশি হয়। মাসল পুল করলে ওই মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় পেশি টানটান ও শক্ত হয়ে থাকে, দুর্বল অনুভব হয়। এমনিক সেই মাংসপেশি ছিঁড়েও যেতে পারে।
গরমে মাসল পুল কেন হয়?
গরমে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। পানিশূন্যতা হলে শরীরের মাংসপেশি ক্লান্তিবোধ করে। এ অবস্থায় মাংসপেশির ওপর চাপ পড়লে বা কাজ করলে মাসল পুল হতে পারে। আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে লবণের ঘাটতি। গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে অনেক লবণ বের হয়ে যায়। এ কারণে মাংসপেশির অভ্যন্তরে পরিবর্তন ঘটে মাসল পুল হয়। এই গরমে যাঁদের মাংসপেশির কাজ বেশি করতে হয়, যেমন কায়িক শ্রম, অনেকক্ষণ হাটা, দৌড়ানো বা ব্যায়াম করা, তাদের এটি হওয়ার আশংকা বেশি থাকে।
করণীয়
মাসল পুল করলে অনেকে ভয় পান বা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। মাংসপেশিকে আগের অবস্থায় আনতে অনেকে টানাটানি করেন। এটা উচিত নয় বরং এতে মাংসপেশি ছিঁড়ে যাওয়ার বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শান্ত–স্থিরভাবে অবস্থান করলে আগের অবস্থা ফিরে আসে। যেহেতু গরমে পানিশূন্যতা থেকে এটা হয়, প্রচুর পানি ও পানিজাতীয় খাবার খেতে হবে। লবণের ঘাটতি পূরণে খাওয়ার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে। মাংসপেশিতে বরফ দিয়ে বা ঠান্ডা কিছু দিয়ে কোল্ড কম্প্রেশন দিলে টানটান ভাবটা ছুটে যায়। এ ছাড়া মাংসপেশির ওপর চাপ পড়ে এ ধরনের কাজ না করাই ভালো।
মাসল পুল যেকোনো সময়ই হতে পারে। গরমে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে, পানিশূন্যতা হলে বা লবণের ঘাটতি হলে ও অতিরিক্ত কায়িক শ্রমে—এ রকম ঘটনা হয়। তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই গরমে সহজেই মাসল পুল প্রতিরোধ করা সম্ভব।
লেখক: ডা. সাইফ হোসেন খান: মেডিসিন কনসালট্যান্ট।
Photo by Ketut Subiyanto from pexels