জন্মের পর থেকে বয়স বাড়ার সঙ্গে উচ্চতা বৃদ্ধির সম্পর্কের কথা সবাই জানি। নির্দিষ্ট বয়স পর এই বৃদ্ধি যে থেমে যায়, তা–ও জানি। কিন্তু উচ্চতা আবার কমেও নাকি? এর পেছনে কারণগুলোই–বা কী?
বয়সকে বেঁধে রাখা যায় না। আর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শরীরে দেখা দেয় নানা জটিলতা। এর মধ্যে অস্টিওপোরোসিস অন্যতম। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর থেকে কমতে থাকে হাড়ের ঘনত্ব। উচ্চতা কমে যাওয়ার এটা অন্যতম প্রধান কারণ। আমাদের জীবনজুড়েই শরীরের ধারাবাহিক কিছু পরিবর্তন ঘটতে থাকে, যেমন পুরোনো হাড় বদলে তৈরি হয় নতুন হাড়। তরুণ বয়সে এসব পরিবর্তনে ভারসাম্য থাকে। কিন্তু জীবনের দ্বিতীয়ার্ধ্বে পা দিলেই বিপদের শুরু। তখন হাড়ের শোষণ হাড় গঠনের চেয়ে দ্রুত ঘটে। এই অসামঞ্জস্যের ফলে হাড় দুর্বল বা ভঙ্গুর হয়ে যাওয়াকেই হাড়ের ক্ষয়রোগ বা অস্টিওপোরোসিস বলে। অস্টিওপোরোসিস সাধারণত মেরুদণ্ডের হাড়কেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে। পুরুষেরা মাঝবয়সের পরে এবং নারীরা মেনোপজের পরে এ সমস্যায় বেশি ভোগেন।
উচ্চতা কমার পেছনে ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্কের ক্ষয় আরেকটি বড় কারণ। আমাদের মেরুদণ্ডের লম্বা হাড়ের মধ্যে একধরনের জেলির মতো পদার্থ থাকে। মূলত কিছু ডিস্কসদৃশ হাড়ের ভেতরে এই পদার্থগুলোর অবস্থান। এরা মেরুদণ্ডকে নমনীয় রাখতেও সাহায্য করে। ডিস্কগুলো মেরুদণ্ডের হাড়গুলোর মধ্যে কুশনের মতো কাজ করে। বয়স যত বাড়ে, ডিস্কগুলোর জেলি শুকিয়ে হাড়ের স্থিতিস্থাপকতা কমতে থাকে। ডিস্ক সংকুচিত হয়ে নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে। এমনকি হাড়ের ফাঁক দিয়ে বেরিয়েও আসতে পারে। এ সমস্যার নাম ডিস্ক হার্নিয়েশন। ডিস্ক পাতলা হয়ে গেলে হাড়ের ফাঁকা স্থান কমে যায়। ফলে উচ্চতা কমতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়া সাধারণত মধ্যবয়সে শুরু হয়। বয়স ৬০ পেরোলে সমস্যা গুরুতর হতে থাকে।
বয়স বাড়লে মানুষের চলন-বলনেও ভিন্নতা আসতে পারে। দূরে যেতে হবে না, বাসার দাদু ও নানু বা প্রতিবেশী বয়স্ক কারও দিকে খেয়াল করুন। দেখবেন, তাঁদের মেরুদণ্ড কিছুটা বেঁকে গেছে। তাই চাইলেও আগের মতো সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না। মাথা ঝুঁকিয়ে, কাঁধ বাঁকিয়ে হাঁটেন। এ ধরনের সমস্যাকে বলে কাইফোসিস। এই পরিবর্তন বিভিন্ন কারণে হতে পারে। পেশির দুর্বলতা, জয়েন্ট শক্ত হওয়ার প্রভাব এই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া পারকিনসনস রোগের মতো স্নায়বিক সমস্যার কারণেও একজন ব্যক্তিকে তার প্রকৃত উচ্চতার চেয়ে খাটো দেখাতে পারে। বিশেষ করে পেট ও পিঠের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়লে মেরুদণ্ড তার স্বাভাবিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে শরীর কুঁজো হয়ে যায় বা সামনে ঝুঁকে পড়ে।
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সুষম খাবার দরকারি। বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি–যুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি উপাদানের অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে। নিয়মিত অলস সময় কাটানো, দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে কাজ করার কারণেও পেশি দুর্বল হতে পারে। এটি শরীরের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে উচ্চতা কমে যেতে ভূমিকা রাখে। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস হাড় শক্ত রাখতে দরকারি ক্যালসিয়াম শোষণের ক্ষমতায় বাধা দেয়। ফলে হাড়ের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। নিয়মিত হাঁটা, নাচাসহ অন্যান্য শারীরিক অনুশীলন হাড় ও পেশি শক্তিশালী করে উচ্চতা কমার হারকে হ্রাস করতে পারে। এ ছাড়া স্ট্রেচিংয়ের মতো ব্যায়াম শরীরের কাঠামোকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
বংশগত কারণেও অনেকের অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অর্থাৎ পরিবারের কারও এ ধরনের সমস্যা থাকলে সেটা আপনাকেও ভোগাতে পারে। এ জন্য নিজের পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের এই রোগের ইতিহাস থাকলে দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করুন। গ্রহণ করুন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া