৯৮ থেকে ৬৬ কেজি, ছয় মাসে ৩২ কেজি ওজন কমিয়ে এখন অনেকটাই ঝরঝরে স্থপতি তাসনিম কবির। ২০২২ সালে দ্বিতীয় সন্তান রিয়াসাতের জন্মের পর তাসনিমের ওজন হয়েছিল ৯৮ কেজি। এ বছরের মার্চের ২৭ তারিখে শুরু হয় তাঁর ওজন কমানোর মিশন। সেপ্টেম্বরে গিয়ে পান কাঙ্ক্ষিত ফল। দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে রাসিনের বয়স ৩ বছর ৯ মাস আর ছোট ছেলে রিয়াসাতের ১ বছর ৩ মাস। দুই সন্তানকে সামলানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন নিয়ে নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। তবে কোনো পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিশিয়ান নয়, তাসনিম কবিরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করেছে ইউটিউব, ই–বুক আর বিভিন্ন মোটিভেশনাল স্পিচ। ওজন কমিয়ে তাসনিম কবির শারীরিকভাবে এখন অনেকটাই সুস্থ। তাহলে চলুন তাসনিম কবিরের ওজন কমানোর পন্থাগুলো জেনে নিই।
সাধারণত রাতে আমরা বেশি ভারী খাবার গ্রহণ করি। এরপরই ঘুমাতে যাই। যে কারণে খাবার ভালোভাবে হজম হওয়ার সুযোগ পায় না। তাসনিম কবির তাই সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে রাতের খাবার শেষ করেন। এই খাবারের তালিকায় থাকে একটি রুটি তার ভেতরে মাংস আর প্রচুর পরিমাণে সালাদের মিশ্রণ। কখনো–বা পাউরুটির ভেতর সেদ্ধ ডিমকে গোলমরিচ দিয়ে বিট করে মিশিয়ে নেন। ‘শুরুর দিকে রাত আটটার দিকে রাতের খাবার খেতাম। ধীরে ধীরে সেই সময় এগিয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় নিয়ে আসি। রাতের খাবার যত আগে খাওয়া যায়, খাবার তত দ্রুত হজম হয় আর স্বাস্থ্য ততটাই ভালো থাকে’, বললেন তাসনিম। এরপর রাতে ক্ষুধা লাগলে বিভিন্ন রকম হাবর্স যেমন দারুচিনি, গোলমরিচ, আদা, লবঙ্গ মিশিয়ে চা পান করেন।
নিজের শারীরিক সুস্থতার কথা ভেবে তাসনিম যখন কঠোরভাবে ডায়েটের সিদ্ধান্ত নেন, তখন খাবার তালিকা থেকে প্রথমেই চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ওজন কমাতে এ সিদ্ধান্ত বেশ কাজে দেয়। সব সময় বাসায় রান্না করা খাবার খেতে এখন অভ্যস্ত তিনি, ‘স্বাস্থ্যকর ও ডায়েট মেনে খাবার খেতে খেতে মুখের টেস্ট বাড এখন এমন হয়ে গেছে যে বাইরের খাবারের টেস্টিং সল্ট আর স্পাইসি টেস্ট কেন জানি আর ভালো লাগে না।’
সকালের খাবারে প্রচুর সবজি ও পানীয় খেতেন তাসনিম। এক গ্লাস পানিতে চিয়া সিড ও ইসবগুলের ভুসি ভিজিয়ে এক ঘণ্টা রেখে সকালে পান করেন। কখনো সঙ্গে থাকে ডাবের পানি। দুই কাপ সবজি আর একটি ডিম ভাজায় শেষ হয় সকালের খাবার। সঙ্গে হঠাৎ কখনো যোগ হয় একটি রুটি।
ডায়েট চলাকাল থেকে এখন পর্যন্ত তাসনিম সারা দিনে শুধু ১ কাপ ভাত খেয়ে থাকেন। দুপুরের খাবার তালিকায় এই ১ কাপ ভাতের সঙ্গে আরও থাকে ২ পিস মাছ। তার প্রতিদিনের খাবারে ওমেগা থ্রি আছে এমন মাছ যেমন ইলিশ, কাতল আর রুই থাকে। কখনো আবার শিং মাছও খেয়ে থাকেন। এখানেও থাকে ২ কাপ সবজি আর ১৫০ মিলি ডাল। একটু ক্লান্ত লাগলে এই সময় ডার্ক চকলেট খেয়ে থাকেন।
ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ২০ মিনিট হাঁটতেন। ‘আসলে দুই বাচ্চাকে সামলে এক্সারসাইজের জন্য খুব একটা সময় বের করতে পারতাম না। তাই সহজ পদ্ধতি হিসেবে হাঁটাকেই বেছে নিলাম’, জানালেন তাসনিম।
ওজন কমানোর জন্য মনস্থির করলে প্রথম দিকে শরীর কিছুটা খারাপ লাগবে। এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে মূল লক্ষ্য থেকে বের হয়ে আসা যাবে না। এই খাবারেই ধীরে ধীরে শরীর প্রস্তুত হবে। একটু দুর্বল লাগলে এক একটা খাবারের ফাঁকে ফাঁকে কলা, পেয়ারা বা একমুঠো বাদাম খেতে পারেন। খাবার তালিকা থেকে সয়াবিন তেল বাদ দেওয়া ভালো। বদলে রাইস ব্র্যান বা শর্ষের তেল খেতে পারেন। তবে শারীরিক ফিটনেস বা গড়ন একেকজনের একেক রকম। তাই ডায়েট শুরু করার আগে জেনে বুঝে পড়াশোনা করে নেওয়া ভালো, এমনটাই বললেন তাসনিম কবির।