প্রচণ্ড গরমে স্কুলে শিশুদের সুস্থ রাখতে কী করবেন

প্রচণ্ড গরমে ছাতা মাথায় স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে শিশুরা। ছবিটি তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে তোলা। ছবি: আশরাফুল আলম
প্রচণ্ড গরমে ছাতা মাথায় স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে শিশুরা। ছবিটি তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মঙ্গলবার দুপুরে তোলা। ছবি: আশরাফুল আলম

প্রচণ্ড দাবদাহের জন্য এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল স্কুল। আজ থেকে আবার খোলা। এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, শিগগিরই গরম কমার সম্ভাবনা নেই। প্রচণ্ড গরমে ছোট–বড় সবার অবস্থাই নাজেহাল। তাই এই গরমে শিশুদের স্কুলে পাঠানোর বেলার অভিভাবকদের সতর্কতা জরুরি। স্কুল কর্তৃপক্ষকেও থাকতে হবে সাবধান।
অতিরিক্ত গরমের মধ্যে দীর্ঘসময় স্কুলে থাকলে শিশুদের পানিশূন্যতার ঝুঁকি তৈরি হয়। শিশুরা বড়দের মতো নয়, শরীরে পানির চাহিদা হলেও সব সময় বুঝতে পারে না। অনেক সময় দেখা যায় তৃষ্ণা পেলেও পর্যাপ্ত পানি পান করছে না। আবার খেলতে শুরু করলে তাদের কিছুই মনে থাকে না। তাই স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে, যানবাহন ব্যবহারের সময়, দীর্ঘসময় রোদের মধ্যে খেলতে গিয়ে শিশুরা দ্রুতই পানিশূন্য হয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আরও দেখা দিতে পারে সানবার্ন (রোদে পোড়া), র‍্যাশ, হিটস্ট্রোক, মুত্রনালির সংক্রমণ (ইউরিন ইনফেকশন), ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ।

অভিভাবকদের করণীয়

স্কুলের পোশাক নরম, ঢিলেঢালা ও সুতির হলে ভালো হয়।
টিফিনে ঘরে তৈরি হালকা খাবার দিন, সঙ্গে যেকোনো একটি বা দুটি মৌসুমি ফল দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তাজা ফলে প্রচুর পানি থাকে, বিশেষ করে নাশপাতি, মাল্টাজাতীয় ফলে। গরমকালে তৈলাক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড দেবেন না।
বাড়ি থেকে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি দিয়ে দিতে হবে। দরকার হলে সঙ্গে দুটি বা তিনটি ফ্লাস্ক বা পানির বোতল দিন। শিশুকে পানি পান করার প্রয়োজনীয়তা ও সময় বুঝিয়ে দিন। বারবার একটু একটু করে পানি খাওয়ার কথা বলে দিতে হবে। পানীয় জল অবশ্যই ফুটিয়ে নিতে হবে। তাতে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস—এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমবে। খুব ঠান্ডা বা গরম পানি খাওয়াবেন না, এটি শিশুর জন্য ক্ষতিকর। কেনা জুস, কোমল পানীয় দরকার নেই। কেবল বিশুদ্ধ পানি দিন। ফলের রস দিতে পারেন।
পানি এবং পানীয়ের জন্য স্টিলের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব পাত্র অবশ্যই ভালোমতো পরিষ্কার রাখতে হবে।
রোদে বা গরমে যেন বেশি দৌড়াদৌড়ি করে না খেলে, সেটা বলে দিন।
শিশু স্কুলে যাওয়ার সময় তাকে রাস্তায় রোদ থেকে বাঁচাতে ছাতা ব্যবহার করুন।
স্কুল থেকে ফেরার পর জামাকাপড় খুলে একটু বিশ্রাম নিয়ে ঠান্ডা হয়ে গোসল করাতে হবে। ভেজা চুল ভালোভাবে মুছে দিতে হবে। প্রতিদিনকার ঘামে ভেজা স্কুল ড্রেস ধুয়ে দিতে হবে।
ঘাম যেন শরীরে না জমে, সে জন্য ঘাম হলে রুমাল দিয়ে মুছে নেওয়া শিখিয়ে দিতে হবে। টিস্যু না দিয়ে ব্যাগে পরিষ্কার নরম কাপড়ের রুমাল বা গামছা দিন।
তাপজনিত অসুস্থতার লক্ষণ, যেমন পেশিতে খিঁচুনি, মাথাব্যথা, মাথাঘোরা, বমি বমি ভাব হলে শিশুকে বলে দিন যেন এ রকম অসুস্থ বোধ করলে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষককে জানায়।

স্কুল কর্তৃপক্ষের করণীয়

স্কুলের সময়টায় শিক্ষার্থীর মূল দায়িত্ব শ্রেণিশিক্ষকের। বাচ্চাদের স্কুলের সময়টাকে আনন্দময় ও উপভোগ্য করে তোলাটাও তাঁর দায়িত্ব। শিশুদের বসিয়ে রাখা সহজ নয়। ওরা লাফালাফি, ছোটাছুটি, দুষ্টুমি করবেই। টিফিন পিরিয়ডে তাদের ব্যস্ত রাখতে ক্লাসরুমে বসে খেলা, ছবি আঁকা, গল্প করতে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এই গরমে স্কুলের মাঠে অ্যাসেম্বলি বা খেলাধুলাজাতীয় ক্রিয়াকলাপ বন্ধ রাখাই শ্রেয়। যেসব স্কুলের পোশাক ভারী এবং গরম সহনীয় নয়, সেসব স্কুলে বাড়ির পাতলা পোশাক পরে আসার অনুমতি দেওয়া উচিত। শিক্ষকেরা প্রতি আধঘণ্টা বা এক ঘণ্টা পর পর সবাইকে একসঙ্গে পানির বোতল খুলে খানিকটা পানি পান করানোর অভ্যাস করতে পারেন। এই কাজে তিনি নিজেও অংশ নিলে আরও ভালো হয়।
স্কুলে থাকাকালীন সময় কোনো শিশু অসুস্থবোধ করছে কি না, এটা লক্ষ করাও শিক্ষকদের দায়িত্ব। কারণ, শিশুরা অনেক সময় তাদের অসুবিধা বোঝাতে পারে না। কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করতে হবে, প্রচণ্ড গরমে সৃষ্ট ক্লান্তি (হিট এক্সজশন) ও হিট স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিক চিকিৎসা কী, সে বিষয়ে স্কুল খোলার শুরুতে একটা ছোটখাট প্রশিক্ষণ আয়োজন করে ফেলা যায়। কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে যেন দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের সচেতন হতে হবে। তাপজনিত সমস্যা সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করতে পোস্টার আঁকা, ছবি দেখানোর পাশাপাশি বারবার ক্লাসে বলে দিতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা: বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর