উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে ওষুধ দিয়েই তাকে নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়
উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে ওষুধ দিয়েই তাকে নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়

আপনি কি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান? এই তথ্যগুলো আপনার জানা থাকা উচিত

উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন একটি নীরব ঘাতক। চিকিৎসা না নিলে হৃদয়, যকৃৎ, চোখ, মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলর বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়া, এই মারাত্মক সমস্যাগুলোর পেছনের অপরাধী উচ্চ রক্তচাপ। তাই উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে জীবনধারার কিছু পরিবর্তনের সঙ্গে ওষুধও শুরু করতে হয়। অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ড্রাগ বা রক্তচাপের ওষুধ নিয়ে আছে নানা দ্বিধা, নানা প্রশ্ন। যেমন ওষুধ কখন খাব, সারা জীবন খাব, নাকি বাদ দেওয়া যাবে, খাবারের আগে বা পরে খাব, ভুলে গেলে কী করব ইত্যাদি। আসুন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করি।

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কখন শুরু করতে হয়

আগেই বলেছি উচ্চ রক্তচাপ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের মারাত্মক ক্ষতির কারণ। তাই শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি চিকিৎসক প্রেসস্ক্রাইব করেন, তবে ওষুধ শুরু করতে হবে। অনেকে চিকিৎসক দেওয়ার পরেও ভাবেন কদিন দেখে নিই, তারপর শুরু করব। অনেকে আবার রক্তচাপ মেপে বেশি থাকলে বা মাথা বা ঘাড়ব্যথা বা খারাপ লাগলে ফার্মেসিতে গিয়ে যেকোনো একটা ওষুধ খেয়ে নেন। এসব করা যাবে না। রক্তচাপের ওষুধ একেকজনের জন্য একেকরকম হয়। চিকিৎসক তাঁর উচ্চ রক্তচাপের কারণ, ইতিহাস, পারিবারিক অবস্থা ও অন্য কোনো রোগ আছে কি না, এমন অনেক কিছু দেখে তারপর ওষুধ নির্ণয় করেন। সুতরাং হঠাৎ করে না বুঝে ওষুধ খেলে সেটি বরং ক্ষতির কারণ হবে।

অনিয়মিত হলে বা ভুলে গেলে কী হবে

অনেকেই ওষুধ খেতে ভুলে যান। একবেলা ভুলে গেলে যখন মনে পড়বে, তখন খেতে হবে। তবে ভুলে গেলে চলবে না। নির্দিষ্ট সময় ওষুধ খেতে হবে। কারণ, রক্তচাপ কমা-বাড়া খারাপ। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রতিদিন নিয়ম করে একই মাত্রায় একই সময়ে খেতে হবে।

সারা জীবন খেতে হবে কি না

হাইপারটেনশনের রোগীদের সবচেয়ে কমন প্রশ্ন হলো, সারা জীবন খেতে হবে কি না। অনেকেই এ কারণে ওষুধ শুরু করতে গড়িমসি করেন। উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে ওষুধ দিয়েই তাকে নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়। ওষুধের ডোজ বা মাত্রা কমানো বা বাড়ানো হয়। কখনোই রোগী নিজে এমনটি করবেন না। চিকিৎসক ঠিক করবেন ওষুধ বাড়াবেন না কমাবেন, বা বদল করবেন কিনা।

দিনের কোন সময় ওষুধ খাওয়ার জন্য ভালো

কিছু অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ আছে যেগুলো শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। এগুলো সকালে সেবন করা ভালো। আবার কিছু ওষুধ আছে যেগুলো ফার্স্ট ডোজ হাইপোটেনশন বা প্রেশার কমে যেতে পারে, এগুলো রাতে দেওয়া হয়।

খাবারের সঙ্গে সম্পর্ক

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সঙ্গে খাবারের আগে পরের কোনো সম্পর্ক নেই। কেবল নির্দিষ্ট সময় মেনে চলতে হবে। কেউ যদি সন্ধ্যা সাতটায় ওষুধ খান, তাঁকে চেষ্টা করতে হবে সাতটার সময়ে খেতে।

ফলোআপ কখন করব

অনেকে একবার ওষুধ শুরু করার পর আর ফলোআপ করান না। কিন্তু অন্যান্য ক্রনিক রোগের মতো উচ্চ রক্তচাপের রোগীকেও সব সময় চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন, নতুন ওষুধ যোগ, ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না এগুলো দেখতে হবে। ভালো থাকলেও নিয়মিত রক্তচাপ মাপতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধের পাশাপাশি জীবনধারার পরিবর্তন খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম, অতিরিক্ত চিনি বা লবণ না খাওয়া, সিগারেট ও মদ্যপান পরিহার—এসব মেনে চললে ভালো থাকা যায়।

ডা. আফলাতুন আক্তার জাহান, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড