চোখ শরীরের অন্যতম সংবেদনশীল অঙ্গ। একইভাবে চোখের আশপাশের ত্বকও অত্যন্ত সংবেদনশীল। চোখের পাতার কিছু পরিচিত সমস্যা হলো চোখের অঞ্জনি, চোখের পাপড়ি, পাতার প্রদাহ ইত্যাদি। অনেক সময় ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ চোখের প্রসাধন, যেমন আইলাইনার, মাসকারা, কাজল ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে এসব রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
চোখের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য চোখের পাতায় অনেক গ্রন্থি থাকে, যা মেবোমিয়ান গ্ল্যান্ড নামে পরিচিত। মেবোমিয়ান গ্রন্থি কিছু তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসরণ করে, যা চোখের আর্দ্রভাব ধরে রাখে। মেকআপসামগ্রী ব্যবহারের ফলে অনেক সময় এসব মেবোমিয়ান গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে চোখে শুষ্কতা দেখা দেয়। আর চোখ শুষ্ক হলে চোখের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
চোখে আইশ্যাডো ও গ্লিটারজাতীয় প্রসাধনীর ক্ষুদ্র কণা থেকে অনেক সময় চোখের অ্যালার্জি বা পানি পড়া রোগ হতে পারে। কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করার সময় সাবধানতা অবলম্বন না করলে চোখের মণিতে ইনফেকশন হতে পারে অথবা মণির ওপরের স্তর উঠে যেতে পারে।
চোখের সুরক্ষা বজায় রেখে প্রসাধনী ব্যবহার করার কিছু নিয়ম—
১. প্রসাধনসামগ্রীর মেয়াদ ঠিক আছে কি না, দেখে নিন।
২. মেকআপসামগ্রী শুষ্ক স্থানে রাখুন। ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখলে মেকআপসামগ্রীতে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে।
৩. একজনের ব্যবহৃত প্রসাধনী অন্যজন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৪. কন্ট্যাক্ট লেন্স ও প্রসাধনী ব্যবহারের আগে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
৫. মেকআপের পাশাপাশি কন্ট্যাক্ট লেন্স ব্যবহারের প্রয়োজন হলে আগে কন্ট্যাক্ট লেন্স পরে নিন, তারপর প্রসাধন ব্যবহার করুন।
৬. কোনো অবস্থায় চোখে কন্ট্যাক্ট লেন্স ও মেকআপ নিয়ে ঘুমাতে যাবেন না।
৭. চোখ লাল বা অন্য কোনো রোগ থাকা অবস্থায় মেকআপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অ্যালার্জি থাকলেও এ ধরনের প্রসাধন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধান।
চোখে কোনো নতুন প্রসাধন ব্যবহারের আগে সেটি আগে হাতে লাগিয়ে নিতে পারেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। কোনো প্রতিক্রিয়া না হলে এবার চোখে ব্যবহার করতে পারেন। যেকোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা মাত্রই চোখ চুলকালে, লাল হলে ফুলে গেলে, চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়লে বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ সেটি ব্যবহার বন্ধ করে দিন। প্রয়োজনে চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
ডা. মামুনুর রশীদ চৌধুরী, চক্ষুবিশেষজ্ঞ, ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা।