ফুসফুস আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি। ফুসফুস বা শ্বাসযন্ত্রটির প্রধান কাজ বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে চালিত করা এবং রক্তপ্রবাহ থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা। ফুসফুসের যেকোনো অসুস্থতা বা সংক্রমণ রোগীকে শ্বাসকষ্ট ও বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা, এমনকি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়।
তাই ফুসফুসের যত্ন নেওয়া বা বিভিন্ন ঝুঁকি থেকে এটিকে রক্ষা করা একান্ত আবশ্যক। জেনে নিন কীভাবে ফুসফুসের যত্ন নিতে হবে:
অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ উজ্জীবিত করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে কোষের ধ্বংস প্রতিরোধ করে এবং ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে পুরো দেহের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
■ ধূমপান পরিহার করতে হবে। ধূমপায়ীদের ফুসফুসের কোষ স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দুর্বল হয়ে থাকে বলে তাঁদের শ্বাসতন্ত্রের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও সবার চেয়ে বেশি। ধূমপানসহ যেকোনো ধরনের তামাক ব্যবহার বর্জন করতে হবে।
■ ফুসফুসের সুস্থতায় সুষম খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ, সি, ই, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং সোডিয়াম, সেলেনিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ। আদা, হলুদ, রঙিন শাকসবজি, তৈলাক্ত মাছ, ডিম, টক ফল, শর্ষে, আমলকী, আপেল, গাজর, বাদাম, কমলা, ব্রকলি, বাঁধাকপি, বাদাম ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল আছে। এসব অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ উজ্জীবিত করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করে কোষের ধ্বংস প্রতিরোধ করে এবং ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে পুরো দেহের সুস্থতা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করতে হবে, যা ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির পাশাপাশি দেহকে টক্সিনমুক্ত করতে ও কোষ উজ্জীবিত রাখতে সাহায্য করবে।
■ ফুসফুস ভালো রাখতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। ব্যায়াম করলে দেহে প্রচুর অক্সিজেন প্রবেশ করে এবং বারবার সম্প্রসারণ-প্রসারণের ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট জোর কদমে হাঁটা, প্রাণায়াম, বড় করে শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়া ইত্যাদি ব্রিদিং এক্সারসাইজ (শ্বাসের ব্যায়াম) খুবই উপকারী। পাশাপাশি প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা নির্বিঘ্ন ঘুমও জরুরি।
■ ফুসফুসের রোগে বায়ুদূষণের প্রভাব অনেক। দূষিত বায়ুর নানা বিষাক্ত উপাদান ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও ঘনবসতি বা অবস্থান শ্বাসতন্ত্র তথা ফুসফুসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এসব পরিস্থিতি থেকে নিজেকে যথাসম্ভব মুক্ত রাখতে হবে। এ ছাড়া হাঁচি-কাশির সময় স্বাস্থ্যসম্মত শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে।
■ ঝুঁকিপূর্ণ রোগী, বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা যাঁদের কম, তাঁদের ফুসফুসের সংক্রমণ তথা মারাত্মক ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিত নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধক টিকা নেওয়া খুবই জরুরি। বর্তমানে বায়ুদূষণসহ অন্যান্য কারণে ছোট–বড় অনেকেই শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগে ভুগছেন। দিন দিন বাড়ছে ফুসফুসের নানা রোগ। তাই আসুন, সবাই সচেতন হই, ফুসফুসের যত্ন নিই।
ডা. মো. খায়রুল আনাম: পরিচালক ও অধ্যাপক, রেসপিরেটরি মেডিসিন, জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা