লাউ রান্নার আগে বীজ ফেলে দেওয়াই যেন নিয়ম। অথচ নানা প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বীজ। রান্না লাউয়ের অংশ হিসেবে তো বটেই, আলাদাভাবেও কিন্তু লাউয়ের বীজ খাওয়া যায়। যদিও বহু পরিবারেই আলাদাভাবে লাউয়ের বীজ খাওয়ার প্রচলন নেই। লাউয়ের বীজের কী কী উপকারিতা আছে, জানলে হয়তো আপনি আর তা ফেলে দিতে চাইবেন না।
লাউয়ের বীজে থাকে ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মস্তিষ্কের কোষের জন্য খুব প্রয়োজনীয় এক উপকরণ। লাউয়ের বীজের ইতিবাচক প্রভাব আছে স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার ওপর। বাড়ন্ত শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্যও তাই লাউয়ের বীজ উপকারী। তবে কচি বা মাঝারি ধরনের লাউয়ের বীজই কেবল খাওয়া যায়। বেশি শক্ত হয়ে গেলে খাওয়ার উপযোগী থাকে না। লাউয়ের বীজের নানা দিক সম্পর্কে বলছিলেন ধানমন্ডির স্পেশালাইজড গ্যাস্ট্রোলিভার কেয়ারের পুষ্টিবিদ ইসরাত জাহান।
ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও লাউয়ের বীজে পাবেন জিংক, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম। কিছুটা আমিষও পাবেন। লাউয়ের বীজে আরও আছে ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই। দুটি ভিটামিনই অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও দৃষ্টিশক্তির স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে লাউয়ের বীজ। দেহের বিভিন্ন কোষের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতেও ভূমিকা রাখে। লাউয়ের বীজ খেলে ভালো ঘুমও হতে পারে, বাড়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। সবচেয়ে বড় কথা, এটা একেবারে সহজলভ্য। এই বীজ তো আলাদাভাবে কিনতে হয় না। বিনা মূল্যে এত উপকার মিলছে যে উপাদান থেকে, তা ফেলে দিয়ে পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হবেন কেন?
লাউয়ের বীজ টেলে নিয়ে ভর্তা করে খাওয়া যায়। শর্ষের তেলে ভেজে ভর্তা করলে স্বাদ বাড়বে নিঃসন্দেহে। তবে তেলের কারণে বাড়তি ক্যালরি গ্রহণ হয়। তাই চাইলে লাউয়ের বীজ সেদ্ধ করে তেল ছাড়াও ভর্তা করতে পারেন। তাতে অবশ্য অত সুস্বাদু না–ও হতে পারে। স্বাদ বাড়াতে অন্যান্য উপকরণ যোগ করা যেতে পারে। আবার টেলে নেওয়া বীজ যোগ করা যায় সালাদে, চাইলে আগে হালকা রোদে শুকিয়েও নিতে পারেন। ভালোভাবে শুকিয়ে, ভেজে বা টেলে সংরক্ষণ করে রাখা বীজ স্ন্যাকস হিসেবেও খেতে পারেন।
কারও কারও বীজ–জাতীয় খাবার খাওয়ায় বিধিনিষেধ থাকে। লাউয়ের বীজের উপকারিতা যতই থাকুক, তা খাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। আর অবশ্যই মনে রাখবেন, স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে অনেক শারীরবৃত্তীয় বিষয় সম্পর্কিত। তাই কেবল লাউয়ের বীজ খেলেই যে এ দুয়ের উন্নতি ঘটবে, তা কিন্তু নয়। শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ বিলম্বিত হচ্ছে বলে মনে হলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।