শীত আসছে। পায়ে মোজা পরার সময়। এমনিতেও জুতা পরলে তার সঙ্গে মোজা পরতেই হয়। যাঁরা নিয়মিত অফিস করেন, তাঁরা সাধারণত জুতা-মোজাই পরেন। কেউ কেউ আঁটসাঁট মোজা পরতে পছন্দ করেন, অনেক সময় মাপ মিলিয়ে মোজা কেনা হয় না। দিনের পর দিন টাইট বা আঁটসাঁট মোজা পরে চলেছেন। এ রকম আঁটসাঁট মোজা পরলে কি কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে?
আমাদের হাত-পায়ের যে অংশে মোজা পরা হয়, সেখানে রক্তনালি রক্ত সঞ্চালন করে। অতিরিক্ত আঁটসাঁট মোজা হাত-পায়ের সে অংশের রক্ত সরবরাহে বাধা প্রদান করে। এ ছাড়া রক্তের পাশাপাশি লিম্ফ নামের তরল, যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন কাজে লাগে, সেটাও বাধাগ্রস্ত হয়। এর পাশাপাশি চাপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে হাত-পায়ের ছোট ছোট স্নায়ু বা নার্ভ।
এ কারণে শরীরে যেসব সমস্যা হতে পারে:
১. পা ফোলা
আঁটসাঁট মোজা পায়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, ফুলে যেতে পারে পায়ের চারপাশ। হাত মোজা পরলে হাতে একইভাবে পানি জমতে পারে। মেডিকেলের ভাষায় একে বলে ইডিমা।
২. অসাড়তা
সঞ্চালন ব্যাঘাতের আরেকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অসাড় হয়ে যেতে পারে পা এবং চারপাশের অংশ।
৩. জ্বালাপোড়া
ছোট ছোট নার্ভ বা স্নায়ুতে চাপ লেগে অনেকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, ফলে সেখানে জ্বালাপোড়া করে।
৪. ছত্রাকের সংক্রমণ
আঁটসাঁট মোজা হাত-পায়ে ঘাম সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ঘামে বিভিন্ন ইনফেকশন, যেমন ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
৫. ত্বকের রোগ
আঁটসাঁট মোজা থেকে বিভিন্ন ত্বকের রোগ, যেমন ডার্মাটাইটিস, ফুসকুড়ি ইত্যাদি হতে পারে। আবার কোনো ক্ষত থাকলে, সেটি বেড়ে ঘায়ে পরিণত হতে পারে। সেই ক্ষতস্থানে নতুন করে ইনফেকশন হতে পারে।
৬. শিরারোগ বা ভ্যারিকাস ভেইন
অতিরিক্ত চাপে পায়ের শিরাগুলো বড় হয়ে যায়, মেডিকেলের ভাষায় যাকে বলে ভ্যারিকাস ভেইন। বেশি বেড়ে গেলে পরে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
তবে কিছু কিছু রোগে চিকিৎসকেরা এক বিশেষ ধরনের আঁটসাঁট মোজা পরার পরামর্শ দেন, সে ক্ষেত্রে কিন্তু আঁটসাঁট মোজাই পরতে হবে। এর বাইরে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য একান্ত প্রয়োজন না হলে দীর্ঘদিন এ রকম আঁটসাঁট মোজা না পরাই উত্তম।
ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি।