নতুন মায়েরা অনেক সময় স্তনে ব্যথার সমস্যায় ভোগেন। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে নীরবে কষ্ট সহ্য করেন, তবু পরিবারের কাউকে মুখ ফুটে বলেন না। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেও সংকোচ বোধ করেন।
স্তনের কোষকলায় বিভিন্ন রকমের সংক্রমণের কারণে প্রদাহ হতে পারে। প্রদাহের কারণে স্তনে ব্যথা, ফোলা ভাব ও কখনো কখনো লাল ভাব দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে জ্বরও হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘ম্যাস্টাইটিস’।
সন্তানকে দুধ পান করান, এমন নারীদের স্তনেই সাধারণত প্রদাহ হতে দেখা যায় বেশি। কিন্তু স্তন্যপান করান না, এমন নারী, এমনকি পুরুষদের স্তনেও হতে পারে ম্যাস্টাইটিস।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ও ভুল পদ্ধতি, স্তনের বোঁটায় ক্ষত, আঁটসাঁট বক্ষবন্ধনী বা সিটবেল্ট ব্যবহার বা ভারী ব্যাগ বহন করার সময় স্তনে চাপ লাগা, মায়ের অত্যধিক ক্লান্তি বা মানসিক চাপ, অপুষ্টি, ধূমপান ইত্যাদি কারণে ম্যাস্টাইটিস হয়ে থাকে।
স্তনে হাত দিলে গরম অনুভূত হওয়া, স্তন ফুলে যাওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ব্যথা করা, টনটন করা, স্তনের উপরিভাগের ত্বক লালচে দেখানো, জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ স্তনে প্রদাহের লক্ষণ।
স্তনে আটকে থাকা দুধই স্তন্যদানকারী নারীদের ম্যাস্টাইটিসের প্রধান কারণ। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় যদি স্তন পুরোপুরি খালি না হয়, তাহলে দুধের একটি নালি আটকে যেতে পারে, যার ফলে স্তনে সংক্রমণ হয়। ব্যাকটেরিয়া স্তনে প্রবেশ করে। এ ছাড়া ত্বক ও শিশুর মুখ থেকে ব্যাকটেরিয়া স্তনের ত্বকের ফাটল বা দুধের নালির মাধ্যমে নালিতে প্রবেশ করতে পারে। স্তনে জমে থাকা দুধ ব্যাকটেরিয়ার উত্তম প্রজননস্থল। সেখানে সংক্রমণ করে প্রদাহ সৃষ্টি করে জীবাণু। কখনো কখনো ব্রেস্ট টিবি বা ইডিওপ্যাথিক গ্রানুলোমেটাস ম্যাস্টাইটিস রোগের কারণে এমনটা হয়।
সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা করা না হলে এবং ব্লক ডাক্ট বা বন্ধ নালি থাকলে প্রদাহ থেকে স্তনে পুঁজ জমা হতে পারে বা ফোড়া হতে পারে। এই ফোড়া সাধারণত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পরে নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয়। জটিলতা এড়াতে, ম্যাস্টাইটিসের লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংকোচ না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
স্তনের প্রদাহের মতো জটিলতা এড়াতে একজন স্তন্যদানকারী পরামর্শদাতা বা ল্যাকটেশন কনসালট্যান্টের সাহায্য নিতে পারেন। একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা অনেক ক্ষেত্রে নার্স বা অভিজ্ঞ ধাত্রীও আপনাকে সঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর কৌশলগুলোর জন্য পরামর্শ দিতে পারেন।
বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় স্তন থেকে দুধ সম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশন করতে হবে। খাওয়ানোর সময় অন্য স্তনে যাওয়ার আগে শিশুকে একটি স্তন সম্পূর্ণরূপে খালি করতে দিন। বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য আপনি যে অবস্থান ব্যবহার করেন, একবার খাওয়ানোর পর তা পরিবর্তন করুন। শিশুকে খাওয়ানোর সময় পজিশন ঠিক আছে কি না, নিশ্চিত করুন। ধূমপান পরিহার করুন।
*ডা. ইসমাত লিমা: সহকারী অধ্যাপক, কলোরেকটাল সার্জারি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা