হেমন্তের বাকি আছে আর মোটে কয়েক দিন। ভোরের দিকে প্রায়ই শীত শীত করে। এই আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় শিশুদের নানা রোগবালাই হয়। জ্বর-ঠান্ডা, সর্দি–কাশি লেগেই থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এ অবস্থার জন্য দায়ী থাকে। ভাইরাসের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রে যে সংক্রমণ হয়, তাকে বলে ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা। এ সময় সারা পৃথিবীতেই সিজনাল ফ্লুর প্রকোপ দেখা যায়। শীতকালে তা বেড়ে যায় অনেক গুণ। জ্বর-ঠান্ডার পাশাপাশি আরও দেখা যায় গলাব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকার মতো সমস্যা, বেশি জটিল হয়ে গেলে নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
এ ছাড়া ফ্লু ভাইরাসের জটিলতা মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ডকে পর্যন্ত আক্রান্ত করতে পারে। এমনকি খুবই কমসংখ্যক হলেও এতে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে। সব বয়সের মানুষ ফ্লুতে আক্রান্ত হলেও জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে শিশু ও বয়স্করা। তাই তাদের ক্ষেত্রেই ফ্লু প্রতিরোধ করা প্রয়োজন বেশি।
সাধারণত ৫ বছর বয়সের নিচের শিশু, বিশেষত যাদের বয়স ২–এর নিচে অথবা যেসব শিশু অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে জটিল আকার ধারণ করতে পারে ফ্লু। পিতা–মাতারা সন্তানকে ফ্লুর থেকে সুরক্ষা দিতে প্রতিষেধক টিকা দিতে পারেন।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, ছয় মাস এবং তদূর্ধ্ব বয়সী শিশুদের বয়স উপযোগী ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দেওয়া উচিত।
সর্বোচ্চ সুরক্ষা পেতে প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লুর টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ফ্লুর টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে ছয় মাসের ওপরে শিশুদের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে এই টিকা দেওয়া উত্তম। কোনো কোনো শিশুর বছরে দুই ডোজ টিকাও লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে প্রথম ডোজ দিয়ে পরবর্তী ডোজ সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে দুই ডোজের মাঝে যেন কমপক্ষে চার সপ্তাহের বিরতি থাকে। সাধারণত ভ্যাকসিন দেওয়ার দুই সপ্তাহ পর ফ্লুর জীবাণুর বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে শুরু করে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও অনেকে ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে তীব্রতা ও জটিলতা সাধারণত কম হয়ে থাকে।
শিশুদের পাশাপাশি যাঁরা শিশুদের দেখাশোনা করেন, তাঁদেরও ফ্লুর টিকা নেওয়া উচিত। তবে যেসব শিশুর ভ্যাকসিনে অ্যালার্জি আছে অথবা ভ্যাকসিন একবার নেওয়ার পর অ্যালার্জি হয়েছে, তাদের এই টিকা দেওয়া যাবে না। ছয় মাসের নিচের বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এখন পর্যন্ত ফ্লু টিকা বা ভ্যাকসিন দেওয়ার সুপারিশ নেই। আমাদের দেশের শিশুদের জন্য প্রচলিত ইপিআই শিডিউলে এখনো ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাই ফ্লুর টিকা দেওয়ার আগে সেটা কখন, কাদের এবং কীভাবে দেওয়া উচিত, কাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া প্রয়োজন, চিকিৎসকের সঙ্গে এসব পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া ফ্লু থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস বজায় রাখা উচিত। হাঁচি বা কাশির সময় মুখ এবং নাক হাতে ঢাকা দেওয়া উচিত এবং তারপর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলা প্রয়োজন।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর